ময়মনসিংহ পুলিশ অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে নজির স্থাপন করেছে। জেলা পুলিশের হটলাইনে অসহায়দের ফোন পেয়ে রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দিচ্ছে পুলিশ। রাতে ঝড়, বৃষ্টি উপো করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় নগরীর অসহায়দের ডেকে ডেকে ডিবি পুলিশ খাবার পৌছে দিচ্ছে। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের ডিিিব পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে পুলিশ এই দুর্যোগকালীন সময়ে ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপুর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সামগ্রী খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করে পুলিশ সুপারের পে ডিবি পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দ বিতরণ করছেন। মঙ্গলবার রাতে বিভাগীয় নগরীর বিপীন পার্ক, তিনকানো পুকুর পাড় ও সানকিপাড়ায় এ সব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
জেলা পুলিশ জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে দুর্যোগে ময়মনসিংহে অসহায়, ছিন্নমূল, নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি বেকার ও কর্মহীনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ সব কর্মহীন, নতুন করে বেকার হওয়া মানুষদের পাশে শুরু থেকেই দাড়িয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান। বস্তিবাসী, অসহায়, অস্বচ্ছল, দিন এনে দিন খাওয়া, কর্মহীন, শ্রমিক, বেদে পরিবারদের খুঁজে খুঁজে তালিকা করে পুলিশ সুপার নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় তিন হাজার অসহায়দের পর্যাক্রমে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন।
করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী একটি মহামারি। করোনা নামক এই অদৃশ্য রোগে দুনিয়া কাপছে। শত কোটি মানুষ চরম দুর্যোগে। মানবতা ক্রমান্বয়ে প্রখর হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় যুদ্ধে নেমেছে পুরো বিশ্ব। এ যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ছে কর্মজীবী মানুষ। বেকার আর অসহায়ের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে পড়া কর্মহীন মানুষ এবং তাদের পেটের আহার যোগাড় করতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন, আপনারা ঘরে অবস্থান করুন। নিজে, পরিবার, সমাজ ও দেশকে বাচান। খাবারের জন্য একজন মানুষও মারা যাবেনা। প্রতিটি মানুষের ঘরে খাবার পৌছে যাবে। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিককর্মী, ও প্রশাসন আপনাদের ঘরে খাবার পৌছে দিবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ময়মনসিংহে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশ জানায়, করোনায় সকল কারখানা, দোকানপাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ থাকায় দিন দিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের নির্দেশে জেলা পুলিশ খুজে বেড়াচ্ছে সমাজের নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবি কর্মহীন, বেকার হয়ে পড়া, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের খুজে খুজে বের করে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সহায়তা করে আসছেন। জেলা পুলিশ নিজেদের অর্থায়নে অসহায় মানুষদের সহায়তা করে আসছেন।
এই মানবিক পুলিশ সুপার বস্তিবাসী, অসহায়, অস্বচ্ছল, দিন এনে দিন খাওয়া, কর্মহীন, শ্রমিক, বেদে,সেলুনকর্মী বা নাপিত পরিবারদের খুঁজে খুঁজে তাদের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করে আসছেন। প্রায় তিন হাজার অসহায়দের পর্যাক্রমে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন। এছাড়া নগরীতে লকডাউনে না খেয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকা ভাসমানদের রান্না করা খাবারের প্যাকেট নিয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে ভাসমান না খাওয়া মানুষের পেটে নিয়মিত আহার তুলে দেন। এছাড়াও দোকান ও মুদ্রণ শিল্প কর্মচারী, সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে এই খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। অপরদিকে অসহায় পরিবারের একাধিক ফোন পেয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে (ডিবি) পুলিশের মাধ্যমে রাতের আধারে খাবার পৌছে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের মানবাধিকতার খবর জেলার সকলস্তরে ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে। পুলিশ সুপারের ফেইসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে খবর পেয়ে তাদের ঘরে খাবার তুলে দিয়ে ক্রমেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ৪৮ এতিমের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা এতিমদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া যেন।
করোনার ভয়াবহতায় ক্রমেই অভাবগ্রস্থের সংখ্যা, প্রকার, শ্রেণী বাড়তে থাকায় মানবিক এই পুলিশ সুপার খোজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, অনেকেই প্রকাশ্য হাত পেতে চাইতে না পেরে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চরম সংকটে রয়েছে। ফোন নাম্বার দিয়ে হটলাইন চালু করেন। এই হটলাইনে খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে রাতে আধারে পুলিশ খাবার পৌছে দিবে। শুরু হয় হটলাইনে খাদ্য সহায়তার অনুরোধ। প্রায় সাড়ে ৭ শতাধিক মানুষ হটলাইনে দাবি জানান।
হটলাইনে দাবিকৃতদের বেশিরভাগ অসহায়, মধ্যবিত্তদের ঘরে খাবার পৌছে দেয় ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে প্রায় শতাধিক মানুষের ঘরে খাবার পৌছে দেয়। এ সময় অসহায়দের কাছে গিয়ে ডিবির ওসি জানতে চান, আপনি পুলিশ সুপারের হটলাইনে ফোন করেছিলেন। উত্তরে জ্বি। আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত। উত্তরে এতজন। আপনি কি এর আগে কোথাও থেকে সহযোগীতা পেয়েছেন। উত্তরে না। অনেকেই এ সময় পুলিশকে বলেন, আমরা লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে না পেরে পুলিশের হটলাইনে ফোন করি। গোপনীয়তার ভয়েই তারা কারো কাছে হাত পাতেন না বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেন।
পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের উদ্যোগে প্রতিদিন খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছে ডিবি পুলিশ। ডিবির ওসি জানান, হটলাইনের তালিকামতে, নিদ্ধিষ্ট এলাকায় গিয়ে তাদের ডেকে ডেকে খাবার পৌছে দেয়া হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। পুলিশ সুপার এ সম্পর্কে বলেন, মুজিববর্ষের অঙ্গিকার পুলিশ হবে জনতার। এই শ্লোগানেই আমরা দৃঢ়তার সাথে কাজ করছি। কেউ না খেয়ে থাকলে মানবিক কারনেই আমরা তার ঘরে খাবার পৌছে দিব। এ জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত।