আগষ্ট মাস বাঙালীর শোকের মাস। এই মাসেই আত্মীয় পরিজন সহ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত একটি জায়গা টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দোখলা বন বিশ্রামাগার ও চুনিয়া গ্রামের প্রয়াত পরেশ ম্রির বাড়ি।
১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি এই তিন দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শিশুপুত্র রাসেল সহ তার পার্ষদদেরকে সাথে নিয়ে মধুপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দোখলা বন বিশ্রামাগারে তিন দিন অবস্থান করেছিলেন।
এই তিনদিন অবস্থানকালীন সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধান রচনার প্রাথমিক কাজটি করেছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দোখলা বন বিশ্রামাগারে অবস্থানকালীন সময়ে অত্র এলাকার চুনিয়া নিবাসী প্রখ্যাত বাম নেতা প্রয়াত পরেশ ম্রি’র বাড়ীতে যান এবং তার পরিবারের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে মিশেন।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয়ের পরও যখন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করে সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের প্রথমভাগে ঢাকার খুব কাছাকাছি মধুপুর বনাঞ্চলের অত্যন্ত প্রাকৃতিক নির্জন পরিবেশে তিন দিন সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঐতিহাসিকরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের এমএনএ ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথেও রাজনৈতিক বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আদিবাসী অধ্যুষিত মধুপুর অঞ্চলের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা পরেশ ম্রি কে বঙ্গবন্ধু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান এবং তিনি বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনের স্মৃতিবিজড়িত দোখলা বন বিশ্রামাগার টি এখনো নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা এবং প্রয়াত পরেশ ম্রির বাড়ীর সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিগুলোও অনেকের কাছেই অজানা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে এবং শোকাবহ আগস্ট মাসে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল তথ্য প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মানসে ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবেই তথ্য প্রতিদিনের প্রকাশক মারুফ হোসান কমল ও নির্বাহী সম্পাদক সুমন চন্দ্র ঘোষ শোকাবহ আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত দোখলা বন বিশ্রামাগার ও চুনিয়া পরেশ ম্রির বাড়ির ডকুমেন্টেশন এর কাজ হাতে নেন । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত চুনিয়া পরেশ ম্রির বাড়িতে কথা হয় প্রয়াত ও পরেশ ম্রির ছেলে বাবুল ধারুর সাথে, তিনি স্মৃতি হাতরে বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শিশু রাসেল শহর তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। বঙ্গবন্ধু আমার বাবার সাথে একান্তে বৈঠক করেন। আমি তখন ১২ বছরের একজন কিশোর এবং পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। আমি খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে দেখেছি, আমার পিতার নির্দেশে তাদের আপ্যায়ন কাজে অংশ নিয়েছি।বাবুল দারু আরো বলেন, আমি স্পষ্ট মনে করতে পারছি খুব সুদর্শন যুবক ছিলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আমার মার সাথে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অত্যন্ত ভাব হয়ে যায়, কারণ তারা দুজনই জর্দা দিয়ে পান খেতে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। আমার মনে পড়ছে শেখ রাসেল প্রায় আমার বয়সীই ছিলো, সে তার মায়ের আশেপাশে শুধু ঘুরঘুর করত এবং আমাদের এই গ্রামের বাড়িতে অনেক ছোটাছুটি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদরা মনে করেন জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এই মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত মধুপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দোখলা বন বিশ্রামাগারটি যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন ইতিহাসের স্বার্থেই এবং এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিজনদের স্মৃতিবিজড়িত প্রয়াত পরেশ ম্রি’র বাড়িটিও যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানান।