লাইফস্টাইল:
দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক দূর থেকে দেখতে ভালো লাগলেও এর পেছনে থাকে অনেক সাধনা ও চ্যালেঞ্জ। একজনকে জড়িয়ে দীর্ঘ সময় কাটানো সহজ কথা নয়।
সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়া সম্পর্কের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ এখানে দেওয়া হল।
একে অপরের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা
সম্পর্কের শুরুতে সবাই নিজের দুর্বলতা খানিকটা আড়াল করা চেষ্টা করে যেন সঙ্গীর আকর্ষণ কমে না যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে একে অপরকে ক্রমাগত আকর্ষিত করার চেয়ে একে অপরের সঙ্গে বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টা বেশি প্রাধান্য পায়। তাই নিজেদের মাঝের লুকোচুরি বাদ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটা গড়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী ও যৌন চিকিৎসন শ্যানন শ্যাভেজ বলেন, “সঙ্গীর সঙ্গে নিজের মতো করে থাকতে যদি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং এতে সম্পর্কের কোনো রকমের ক্ষতি না হয় তাহলে বলা যায় সম্পর্কের আকার ঠিকঠাক আছে।”
এর মানে হল আপনি নিজের মতো করে মতামত দিতে পারেন, সঙ্গীর মন রাখতে চুপ থাকা বা তার মনের মতো উত্তর দিতে হয়না।
“যদি এমন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকেন যেখানে স্বাধীনভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন এবং সঙ্গী আপনার কথা শুনতেও প্রস্তুত থাকেন তাহলে বুঝতে হবে এই সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।” এমনটাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহ ও পরিবার বিশেষজ্ঞ জোন পল বার্ড।
ধারাবাহিকভাবে একে অপরের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন
যদি একে অপরের খোঁজ রাখেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন এবং ছোট বড় যে কোনো পদক্ষেপে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখেন তাহলে তা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের লক্ষণ।
“নিয়মিত একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন সম্পর্কে আন্তরিকতা তৈরি করে এবং একে অপরের কাছে নিরাপদ বলে অনুভব করে।” এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিশেষজ্ঞ এবং মহিলা ও এলজিবিটিকিউ ক্ষমতায়ন-বিষয়ক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা দেবরাহ ডুলি।
অতীত প্রকাশ করা
সম্পর্কের শুরুতে না হলেও সম্পর্কে থাকা অবস্থায় নিজের সকল বিষয় সঙ্গীর কাছে খুলে বলা এবং মানসিক বা অন্যান্য সমস্যা খুলে বলা ভালো।
“নিজের নেতিবাচক দিকগুলো সঙ্গীর সঙ্গে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা যথেষ্ঠ সাহস, পরিপক্কতা ও মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন, ‘গাইজস্টাফ কাউন্সেলিং ডটকম’য়ের পরামর্শ বিশেষজ্ঞ কার্ট স্মিথ।
সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং একসঙ্গে সারাজীবন কাটাতে এই ইতিবাচক গুণগুলো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সহভাগী মনোভাব
দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে একে অপরকে নিজের দল বা সমগোত্রীয় বলে মনে করেন। একে অপরের সফলতায় হিংসা নয় বরং আনন্দিত হয়।
বার্ড মনে করেন, যখন একে অপরের সফলতায় খানিকটা অনিরাপদ বা অস্বস্তি অনুভব করেন তখনই সম্পর্কে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
ভুল স্বীকার
জীবনে চলার পথে ভুল ত্রুটি হতেই পারে। তবে তা স্বীকার করা এবং এর জন্য ক্ষমা চাওয়া সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ।
স্মিথের মতে, “ছোট্ট একটা কথা ‘দুঃখিত‘ – এটা চমৎকারভাবে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে পারে।”
দুজনেই ভালো শ্রোতা
একে অপরের কথা ধৈর্য্য ও মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন, ডুলেই।
সঙ্গীর কথা শোনায় অমনযোগিতা তার ভাব প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে এতে সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে সঙ্গীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনাও সম্পর্কের প্রতি সম্মান দেওয়া হয়।
একই নীতি ও লক্ষ্যের অধিকারী হওয়া
পরিবারে একজনের মূল্যবোধ বা ইচ্ছে অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হলে তা সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে দুজনের ইচ্ছে অনিচ্ছা, আর্থিক পরিকল্পনা, অভ্যাস ইত্যাদিতে মিল থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনগত ঝগড়া
সম্পর্কে থাকা অবস্থায় ছোট বড় বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি, হতেই পারে। তবে তা যেন যৌক্তিক হয় এবং ঝগড়া জয়ী হওয়ার চেষ্টা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি।
ক্যালিফোর্নিয়ার বিবাহ ও পরিবার বিশেষজ্ঞ উইনিফ্রেইড রেইলি বলেন, “ঝগড়া বিবাদ হলেও তাতে অপ্রাসঙ্গিক কথা, নোংরা কথা অথবা একে অপরকে অপমান করে কথা না বলা সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার লক্ষণ।”
নতুন জিনিস একসঙ্গে উপভোগ করা
সম্পর্কে একঘেয়ামি চলে আসলে তা দূর করতে পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, একসঙ্গে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি দূরত্ব কমাতে সাহায্য করে।
শ্যাভেজের মতে, “স্থায়ী সম্পর্কে থাকা দম্পতিরা একসঙ্গে বড় হয়, একসঙ্গে থাকে। তাছাড়া একসঙ্গে নতুন জিনিস উপভোগ করা সম্পর্ক প্রাণবন্ত ও দৃঢ় করে।”
আবেদনময় মুহূর্ত সৃষ্টি
শ্যাভেজের মতে, “দুজনের একই বিষয় ভালো না লাগলেও কিছু মুহূর্তকে সুন্দর করে তোলার জন্য দুজনের, বিশেষ করে সঙ্গীর ভালোলাগে এমন আবেদনময় মুহূর্ত তৈরি করুন। এতে দুজনের মাঝের বোঝাপড়া বাড়ে এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।”
ছবি: রয়টার্স।