তথ্যপ্রতিদিন. কমঃ
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর এবার আসছে আরও বড়-সড়ো অভিযান। গত কয়েক বছরে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদেরকেই টার্গেটে রাখা হয়েছে এবারের অভিযানে। ইতিমধ্যেই শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সেক্টরভিত্তিক দুর্নীতিবাজদের তালিকা করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাটির তালিকায় মন্ত্রী-এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও রয়েছেনে। তালিকায় থাকা দেড় শতাধিক দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদের ডাটাও সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। ইতিমধ্যেই ওই তালিকা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এখন ‘গ্রীণ সিগন্যল’ মিললেই তালিকা ধরে শুরু হবে অবৈধ সম্পদ উপার্জনকারী এসব ভিআইপিদের বিরুদ্ধে সাঁড়শি অভিযান। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারে অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ কঠোর সিদ্ধান্তে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দলের এমন- অনেক শীর্ষ নেতাই আতংকিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন কিংবা দেশ ছেড়ে পালানোর চিন্তা করছেন।
ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা গ্লোবালটিভিকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তারা মনে করেছিলে, চলমান এ অভিযানটি ক্যাসিনো এবং জুয়ার বিরুদ্ধেই চালানো হবে। তবে পরবর্তী সময় তারা জানতে পেরেছেন এ অভিযানটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তালিকা ধরে প্রথমে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ এবং অবৈধ সম্পদ উপার্জনকারীদের ধরা হবে। তারপর মধ্যসারি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হবে বলে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশেষ করে সম্প্রতি নিউ ইর্য়কে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ’কেউ যদি অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে এবং তার অনিয়ম, অসততা ধরা পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তারা যে-ই হোক না কেন, এমনকি আমার নিজ দলের লোক হলেও।’ আর সরকার প্রধানের এমন বক্তব্যে গত কয়েক বছরে যারা দলের না ভাঙ্গিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আমাদের চলমান অভিযান শুধু ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার বিরুদ্ধে নয়। আইন অমান্যকারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা অনৈতিক ব্যবসা করেন, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে। অন্যায়কারী জনপ্রতিনিধি বা কর্মচারী যে-ই হোক না কেন সবাইকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে অভিযান দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খুব গোপনে দুর্নীতিবাজদের একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
সূত্র জানায়, তালিকায় শুধু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপিই আছে অর্ধশতাধিক। টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোর টাকার কমিশন খাওয়া বেশকিছু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপির নামও রয়েছে এ তালিকায়। গোপন এ তালিকাটির ব্যাপারে সরকার প্রধান ছাড়া তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ মোট ৫ জন অবগত আছেন বলে একটি সূত্র গ্লোবালটিভিকে জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতিবাজদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিবাজ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের সম্পদের হিসাব ও উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজের তালিকা নিয়ে কাজ করছে একাধিক গোয়ন্দা সংস্থা এবং দুদক। রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ তালিকায় রয়েছে। এছাড়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনোর শত শত কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার সঙ্গে রাজনীতিবিদ ছাড়াও প্রশাসনের কোন স্তরের কারা জড়িত তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দেশের বাইরে কোন চ্যানেলে কীভাবে টাকা পাচার করা হয়েছে সেটা নিয়েও কাজ করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকেও গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলমান অভিযান নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণু)’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন, এখানে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধ প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। সব মিলিয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন ক্ষমতসীন দলটির এমন অনেক নেতা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ক্যাসিনোসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর যুবলীগের তিন নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেনসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযানে নগদ ১৭ কোটি টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২০১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে।
ছবি, সংগৃহীত