৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ অপরাধ ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে অর্শ্ব গেজ ভগন্দর চিকিৎসার নামে প্রতারণা
১৬, অক্টোবর, ২০১৯, ৭:৪৯ অপরাহ্ণ -

জহির রায়হান,  :
ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দির হরিরামপুরের একসময়ের রিক্সাচালক
কামাল (৩৫) ভুয়া রেজিঃ নম্বর ব্যবহার করে অর্শ্ব, গেজ ও ভগন্দর রোগের চিকিৎসার
নামে প্রতারনা করে আসছে। কিছু স্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে
দালালদের মাধ্যমে দুরদুরান্ত থেকে রোগী সংগ্রহ করে চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা
হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারনার কৌশল হিসেবে তিনি তার ভিজিটিং কার্ডে কবিরাজ মোঃ
কামাল হাকিম নামে দাবী করেছে। সে “হেকিমী দাওয়াখানা” নামে প্রতিষ্ঠানের নাম
দিয়েছেন। তিনি তার কার্ডে উল্লেখ্য করেছেন ২০ বৎসরের চিকিৎসায় অভিজ্ঞতায় বিনা
অপারেশনে শুধু মাত্র ঔষধ দ্বারা মাত্র ৩০ মিনিটে অশ্ব বা গেজ ও ভগন্দর রোগের
চিকিৎসা করা হয়। আরো উল্লেখ করেছেন মহিলাদের জন্য মহিলা চিকিৎসক আছে। নালীর
অপারেশন ঔষধের সাহায্যে করা হয়।
তিনি জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কবিরাজ মোঃ কামাল
হেকিম রেজিং নং ১৪২ ঢাকা লোকমান হেকিম দাওয়াখানা হইতে অর্শ্ব বা গেজ ভগন্দর
রোগের চিকিৎসার পাঁচ বৎসর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে (ক) বিভাগে উত্তীর্ণ
হয়েছে। এই সনদে কো-অর্ডিনেটর  ও নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত হলেও কোন তারিখ
উল্লেখ নেই। লোকমান হেকিম দাওয়াখানার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ নেই। কত সন থেকে কত
সন পর্যন্ত হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাও উল্লেখ নেই। তার বয়স ৩৫ বছর আর
অভিজ্ঞতা ২০ বছর। এই হিসেবে ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি কবিরাজী করে আসছেন। তার বাবা
আজিজুল হাকিম কবিরাজী করেন, তার কাছ থেকে কবিরাজী শিখেছেন। তিনি জানান,
সিংহেরশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আন্ডার মের্ট্রকি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কোথা
থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন ময়মনসিংহ লোকমান হেকিমী
দাওয়াখানা থেকে। ময়মনসিংহের ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন ঠিকানা ঢাকায়।
ঢাকার ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দাদী এড. কল্পনা সরকার আমাকে সনদটি
করে দিয়েছে। আপনার কোন সমস্যা আছে। আপনি সাংবাদিক যা পারেন করেন। দারোগা, ওসি,
মন্ত্রী, মিনিস্টার নিয়ে আসেন আমারে ধইয়া কোর্টে নিলে আপনার কি?  এব্যাপারে
এড. কল্পনা সরকার জানান, কামালকে আমি মক্কেল হিসেবে চিনি। দাওয়াখানার সনদ
সংগ্রহ করে দেয়নি। আমি তার পক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন সহ বিভিন্ন মামলার
আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। সে এত বড় মিথ্যা কথা বলেছে। আমি ভাবতেও পারছি না।
এব্যাপারে মোমেনশাহী আর্য়ুব্বেদিক কলেজের অধ্যক্ষ কবিরাজ শ্রী কৃষ্ণ কান্ত রায়
বলেন, একজন সনদধারী কবিরাজ বা হেকিম হতে হলে কমপক্ষে এসএসসি পাশ হতে হবে। এ
জন্য ৪বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে পাস করতে হবে। পাস
করার পর হাতে কলমে শিক্ষার জন্য ৬ মেয়াদী ইর্ন্টানী করতে হবে। পরে যে সনদে
দেয়া হবে তাতে শিক্ষাবর্ষ উল্লেখ থাকবে। এতে তারিখসহ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও
সচিবের স্বাক্ষর থাকবে। আর্য়ুবেদীয় বা ইউনানী কলেজ ডিপ্লোমা ও ইন্টার্নী করা
সনদধারীই নামের আগে বা পরে কবিরাজ বা  হাকিম পদটি ব্যবহার করতে পারবে। আর
দাওয়াখানা থেকে কোন সনদ দিতে পারে না।
স্থানীয় ভাইটকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন বলেন, আমি তাকে
চিনি কিন্তু তার লেখাপাড়া সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। চিকিৎসা বিষয়ে লেখাপাড়া
করেছে কিনা আমার তা জানা নেই। তার বাবা গ্রাম্য ফকিরী বা কবিরাজী করত হয়ত তার
কাছ থেকে কিছুটা শিখেছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, অশিক্ষিত কামাল এর আগে রিক্সা চালিয়ে
জীবিকা নির্বাহ করতো। হঠাৎ তিনি কবিরাজ বনে যান।  অশ্ব, গেজ ও ভগন্দরের মতো
গুরুত্বপুর্ন একটি রোগের চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে।
দুরদুরাত্ব আসা অধিকাংশ অশিক্ষিত রোগী হওয়ার কারণে প্রতারনার শিকার হয়েও তার
বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করতে সাহস পায় না। প্রতিটি রোগী কাছ ৫ হাজার টাকা থেকে
৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। সে জানায়, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন রোগীর
চিকিৎসা করেন। চিকিৎসার কি ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেন সঠিকভাবে সে ঔষধের নামও বলতে
পারে না। এলাকার সাধারণ মানুষ বড় ধরণের দুর্ঘটনার ঘটার আগেই কথিত কবিরাজ
কামালের প্রতারনা বন্ধের জন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনসহ ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের
হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।