১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ ফিচার, ময়মনসিংহ মা দিবসে জেলা আ:লীগ সেক্রেটারি মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের আবেগঘন স্ট্যাটাস।।
১৩, মে, ২০২০, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ - প্রতিনিধি:

বিশ্ব মা দিবসে সাবেক কিংবদন্তী ছাত্রনেতা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এক অাবেগঘন স্ট্যাটাস দেন তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে।তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবুহু উদ্ধৃত করা হলো:

আজ আমার মায়ের কথা মনে পরছে। ১৯৮৭ সালে, মাস টা মনে নেই আমি খুব ওয়ান্টেড, মাত্র জেল থেকে বেড়েয়েছি মার কাছে গ্রামের বাড়ি গফরগাঁও গেলাম। পুলিশ আসতে পারে ভয়ে ভয়ে দুটি রাত কাটালাম তারপর বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মা মুখে কাপড় দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে শেষ কথা বলেছিলো বাবা সাবধানে থেকো।

আমি আর ফিরে তাকাতে পারিনি চলে এসেছিলাম তারপর ভারতে পালিয়ে যাই। কয়েকমাস কাটিয়ে আনন্দ মোহন কলেজের নির্বাচন কে সামনে রেখে বাংলাদেশে ফিরে আসি৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেই। শানকি পাড়া এলাকায় নির্বাচন এর কাজ করছিলাম তখন বিকাল ৩ টা একটি মটর সাইকেল এসে আমাকে তুলে নিয়ে গেলো খালিদ বাবু (বর্তমান সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী) এবং ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগ এর সভাপতি এহতেশামুল আলম ভাই এর কাছে।

আমি ভেবেছিলাম আমার নিরাপত্তার কারনে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে কারন তখন বিএনপি জাপা ফ্রিডম পার্টি মাস্তান গুন্ডা রা আমাকে মেরে ফেলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো। আমার দুই নেতা আমাকে বল্লেন তোমার মা একটু অসুস্থ তোমাকে বাড়ি যেতে হবে। আমি বল্লাম অবশ্যই যাবো। ৪.৩০ টার ট্রেনে আমি রওনা হলাম কাওরাইত গিয়ে নামবো স্টেশনে আমাদের নেতা সামছুল হক সাহেব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যার সহ অনেক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এর নেতাকর্মী রা উপস্থিত।

কাজী , কুদ্দুস, জিলু, আহমদ, অমল সরকার, আলম, মুকুল, ফিরোজ এরা আমাকে প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে একটি প্রথম শ্রেণীর কামড়ায় নিয়ে গিয়ে তুলে দেয় । ট্রেন ছেড়ে দিলো একটু ঘুম ভাব এসে গেলো কাউরাইত স্টেশনে নামলাম আমি দেখলাম অনেক ছেলেরা এসেছে। আমার মনে হলো গোলাম ফেরদৌস জিলু কে জিজ্ঞাসা করলাম আমার মা কি নেই?? তোমরা আমাকে বলছো না কেনো?

মুকুল ফিরোজ সহ সকলের নিরবতা দেখে আমি কেঁদে ফেল্লাম তারপর বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
মায়ের লাশ দাফন করে পরের দিন চলে এলাম মা কে রেখে এলাম। আমি কারো সাথে কথা বলিনি পথে বুক ভরা কান্না নিয়ে ফিরে এলাম ময়মনসিংহ শহরে। তিনদিন পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলো জয়লাভ করলাম কিন্তু আমার মা কে হারিয়ে ফেল্লাম। এখনো আমার মায়ের কান্না ভরা মুখ টা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমার চোখ জলে ভরে যায়।

অনেকদিন পরের ঘটনা আমার একটা ছোটো বোন গাজিপুর হোতাপাড়া বৃদ্ধাশ্রমে চাকরি করতো ওর ওখানে গিয়েছিলাম বৃদ্ধাশ্রমের মা বাবা দের দেখার জন্য। সেখানে পরিচয় হলো একজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকার্তার মায়ের সাথে। মা টি বলছিলেন তোমরা একটু বসো আমাকে আজ আমার ছেলে দেখতে আসবে। কিন্তু যতক্ষণ ছিলাম ঐ মায়ের ছেলে আসেনি৷ তারপর একটু এগিয়ে গেলাম আর এক মায়ের সাথে দেখা হলো কথা হলো সেই মা আমাকে বল্লেন তোমরা জানো? আজ আমার ছেলে আসবে আমার নাতিন কে নিয়ে…… সময় ছিলো না বলে আর অপেক্ষা করিনি।

আমার স্ত্রী দিলরুবা শারমিন বলছিলো ভালো লাগছে না মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে চলো চলে যাই মায়ের এসব সন্তানের সাথে দেখা না হলেই ভালো।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে এসেছিলাম। মায়ের কথা আর একটু বলবো আমি তখন কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে আইনজীবী পেশায় যোগদান করেছি। আমার সিনিয়র এডভোকেট মঞ্জুরুল হক স্যার আমাদের রুমের দরজার কাছে বসে থাকা এক মহিলা কে দেখিয়ে বল্লেন এই মহিলা যিনি বসে আছেন তিনি হেলাল ডাকাতের মা। হেলাল ডাকাত গফরগাঁও ভালুকা এলাকার ত্রাস সন্ত্রাস প্রখ্যাত ডাকাত ছিলো। আমি ঐ মা কে জিজ্ঞাসা করলাম এই যে মা আমি আপনার ছেলে হেলালের সাথে জেলখানায় ছিলাম তার সাথে দেখা হয়েছে। মা প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে আমার সাথে কথা বল্লেন। জিজ্ঞেস করলেন বাবা আমার ছেলেটা কেমন আছে? আমি বল্লাম ভালোই তো দেখে এসেছি আপনি জেলখানায় যান না? প্রশ্ন করলাম। উনি বল্লেন যাই কিন্তু শিকের জন্য ছেলেটাকে ঠিকমতো দেখতে পারি না কথা বলতে পারি না।

একসময় আমি বল্লাম আপনার ছেলে তো অনেক খুন খারাবি করেছে ডাকাতি করেছে আপনার ছেলের ১৬৩ বছর জেল হয়েছে। সে আর কোনোদিন বের হতে পারবে না এটা কি জানেন? তিনি বল্লেন বাবা সবই জানি মনটা তো কাঁদে পেট টাতো পুড়ে সন্তানের জন্য আমি তো মা। এই পেটে তাকে রেখেছিলাম উকিল সাহেবের কাছে এসেছি আমার নিজের পালা ৬ টি মুরগী বিক্রি করে ২৫০ টাকা নিয়ে যদি কিছু করা যায়…….

মায়েরা এমনি হয় সন্তানের জন্য তারা বোঝবিচার মানতে চায় না। সকলের মায়ের বেলায় কথাটি খাটে। মা নাম টি স্বর্গ থেকে এসেছে যার কোনো তুলনা নেই। দুই পুত্রের যুদ্ধের সময় মা থাকেন মাঝখানে মা কারও বিরুদ্ধে যান না যেতে পারেন না কারন তিনি মা।