করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে বারবার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের জন্য কাছ করবে এটাই স্বাভাবিক। পাশপাশি রয়েছে প্রশাসনও। মহামারি করোনা কিংবা দেশের সঙ্কটময় সময়ে রাজনীতিবিদরা মানুষের পাশে থাকবে না। এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়। জনকল্যাণের জন্য রাজনীতি, রাজনীতির জন্য জনগণ, এর কোনো বিকল্প নেই। জনগণের দুঃসময়ে যদি রাজনীতিবিদরা তাদের পাশে না দাঁড়ায়-এটা কাঙ্ক্ষিত আচরণ হতে পারে না।
অথচ করোনাকালে সমালোচিত হয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ত্রাণের জিনিসপত্র আত্মসাতের। আর এমপি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মাঠে অনুপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ী ও কোটিপতি এমপি রয়েছেন, তারা ঢাকায় বসে নীরবতা পালন করছেন। এত সমালোচনার মাঝে কিছু কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, প্রাণ ঝুঁকি উপেক্ষা করে মাঠে করোনা মোকাবিলায় নেত্রীর নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের পাশে পেয়ে করোনা মোকাবিলায় সাহস পাচ্ছে দেশের জনগণ। কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষ পাচ্ছে কিছু খাদ্য উপহার। জনগণ এ ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। দেশে পরিক্ষিত এ রকম আলোচিত এক ডজন জনপ্রতিনিধি ও এমপিদের আজকের প্রতিবেদন।
১. তোফায়েল আহমেদ
করোনা সংকটের শুরু থেকে তোফায়েল আহমেদ তার এলাকার কোনো মানুষ যাতে দুঃখ দুর্দশায় না থাকেন, সেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। দফায় দফায় তিনি খাবার পাঠাচ্ছেন এবং তার উদ্যোগে সেখানে দুঃস্থদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দুঃস্থদের নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দুঃস্থ নয়, মধ্যবিত্ত ও যারা এখন অনটনে রয়েছে তাদেরকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে তোফায়েল আহমেদের উদ্যোগে।
২. শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান করোনা সংকটের শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রথমত, তিনি দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তার এলাকার করোনায় আক্রান্তরা যাতে চিকিৎসা পায় তা নিশ্চিত করছেন। তার উদ্যোগে করোনা পরীক্ষার ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। শুধু তা-ই নয়, নারায়ণগঞ্জে করোনায় যারা মারা যাচ্ছে তাদের দাফন যাতে ঠিকমতো হয় সেই ব্যাপারেও তিনি তদারকি করছেন। করোনা সংকটের সময় তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
৩. জাহিদ আহসান রাসেল
গাজীপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাহিদ রাসেল তার এলাকায় করোনা সংকটের পর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সেখানে ত্রাণ নিয়ে কোন অভিযোগ নাই। গরীব মানুষের মধ্যে কোন খাদ্য সংকট বা অন্য কোনো অভিযোগ একেবারেই নেই। সংসদীয় আসনের ৩৫ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নেতৃবৃন্দদের হাতে অসহায় মানুষের জন্য ঈদের উপহার শাড়ী-লুঙ্গি পৌঁছে দেন । তাছাড়া এপযর্ন্ত প্রয়োজনীয় পণ্য মিলিয়ে খাদ্য সামগ্রী ৮০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন। বিতরণকৃত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাউল, আলু, ডাউল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ ইত্যাদি।এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ২৪ টি ফেডারেশন থেকে মনোনীত প্রায় ছয় শতাধিক খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছন । দেশব্যাপী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খেলোয়াড়দের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করেছেন।
৪. জাহাঙ্গীর আলম
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র বলেন, করোনার প্রাদর্ভাব ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটি, ঘরে থাকার কারণে কর্মহীন, অসহায় হয়ে পড়া মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য এ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরী বিভিন্ন এলাকায় ৮০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২শ টন চাউল খাদ্য সহায়তা হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত চাউলের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের অর্থে প্রায় ১৮শ থেকে ১৯শ মেট্রিক টন চাউল এবং বাকিটা মেয়রের ব্যক্তিগত অর্থে চাউল ক্রয় করা হয়েছে। এই চাউলের সাথে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মিলিয়ে খাদ্য সামগ্রী ৮০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাউল, আলু, ডাউল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ ইত্যাদি।
মেয়র আরো বলেন, চায়না থেকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বাবদ ২৫ কোটি টাকার সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। এসব সামগ্রী মেয়রের নিজস্ব টাকায় আনা হয় এবং গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও এলাকায় বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহার করার জন্য এসব সামগ্রী যেমন পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, থার্মাল থার্মোমিটার ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।
৫. মির্জা আজম
জামালপুরের এমপি মির্জা আজমও করোনা সংকটের সময় এলাকায় জনগণের বন্ধু হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। করোনা সংকটের এই সময়ে তিনি জনগণের অভাব, অনটন, দুঃখ, দুর্দশা দূর করার জন্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণকে বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ যেন ত্রাণ সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মির্জা আজম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
৬. এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী
রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ৩ কোটি টাকার ত্রাণ তহবিল গঠন করে ৬৫ হাজার মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি ফোন কলের মাধ্যমে ১০ হাজার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের নিকট খাদ্যদ্রব্য নিয়ে গেছেন। এলাকার মোড়ে মোড়ে ১৫ টি ভ্যানগাড়িতে করে ফ্রি মাছ ও শাকসবজি পৌঁছে দিচ্ছেন।
১শ’ ডাক্তার দিয়ে ফ্রি টেলি-চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছেন। পুরো রমজান জুড়ে করোনার ফ্রন্টলাইনে থাকা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দৈনিক ২ হাজার মানুষকে সেহেরীর খাওয়াচ্ছেন। রাউজানের ১৪শ’ জন ইমাম-মুয়াজ্জিন, সকল মন্দিরের ৪শ’ জন পুরোহিত, প্যাগোডার ২শ’ জন ভিক্ষুক ও সাথে ২শ’ প্রতিবন্ধীকে খাদ্যদ্রব্য উপহার দিয়েছেন। এমন কি দেশে এমপিদের মধ্যে প্রথম যিনি ৮ মাসের সম্মানী বাবদ পাওয়া ১৫ লক্ষ টাকা ত্রাণ তহবিলে জনগণের জন্য বিলিয়ে দিলেন।
৭. মাশরাফি বিন মর্তুজা
করোনা সংকটের শুরু থেকেই মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইলের জন্য অন্যরকম ভাবে কাজ করছেন। তিনি এলাকায় যেমন ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন, তেমনি মানুষকে সচেতন করা এবং অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার ব্যাপারেও তার উদ্যোগ প্রশংশা পেয়েছে।
৮. শেখ সারহান নাসের তন্ময়
শেখ তন্ময় করোনা সংকটের সময় একদিকে যেমন ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, তেমনি চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষদের ঘরে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার এসব উদ্যোগ ব্যাপকভাবে জনগণের কাছে অভিনন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছে।
৯. নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী)
মাদারীপুর থেকে নির্বাচিত এমপি নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) করোনা সংকটে সার্বক্ষণিকভাবে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে আছেন। তাদের সব ধরনের সমস্যা ও অভাব অনটন দূর করার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের দিকে না তাকিয়ে নিজ উদ্যোগে তিনি নিয়মিতভাবে গরীব মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছেন।
১০. শেখ হেলাল উদ্দীন
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন তার এলাকায় করোনা সংকটের পর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সেখানে ত্রাণ নিয়ে কোন অভিযোগ নাই। গরীব মানুষের মধ্যে কোন খাদ্য সংকট বা অন্য কোনো অভিযোগ একেবারেই নেই।
১১. মো: শাহরিয়ার আলম
রাজশাহীর এমপি মো. শাহরিয়ার আলম তার নির্বাচনী এলাকায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছেন। মানুষকে নগদ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দুঃস্থ মানুষের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করে তিনি এলাকায় জনবন্ধু হিসেবে আলোচিত হয়েছেন।
১২. ময়মনসিংহের ফুলপুর – তারাকান্দার সংসদ সদস্য ও গৃহায়ণ ও গণপুর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ তার নির্বাচনী এলাকা ও ময়মনসিংহে সুষ্ঠু ভাবে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করে আবারও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
* অপরদিকে ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু এই করোনা মহামারিতে প্রতিদিন অসহায় মানুষের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা দিয়ে অভিনন্দিত হয়েছেন । যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।