
মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
শীতকালে খেজুরের গুড় পিঠাপুলির অন্যতম উপকরণ। আদিকাল থেকেই বাঙালি জাতির এক অনুপম খাদ্য সামগ্রীর উপকরণ খেজুরের রসের পাটালী গুড় ও লালী গুড়। সেই গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। এ সব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় পীরগঞ্জ উপজেলার হাটবাজারে বেচাকেনা চলছে। জানা গেছে, বাজারে চিনির দামের চেয়ে খেজুর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় অন্তত পাঁচ-সাত বছর ধরে গাছিরা এ প্রক্রিয়ায় ভেজাল খেজুর গুড় উৎপাদন ও বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে যেসব খেজুর গুড় এখন পাওয়া যাচ্ছে, তার শতকরা ৯৯ ভাগই চিনি মেশানো।গাছিরা জানান, শীত যত বেশি পড়ে, খেজুর গাছ থেকে তত বেশি রস সংগৃহীত হয়। এবার শীতের তীব্রতা শুরু থেকেই অনেক কম। ফলে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পরিমাণও কম হচ্ছে। আবার আগের মতো ঝোঁপ-ঝাড় না থাকায় খেজুর গাছও কমেছে। পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা না হলেও ঝোঁপ-ঝাড়ের সঙ্গে ব্যাপক হারে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে রস সংগ্রহের পরিমাণ অনেক কমেছে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাজারে গুড়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদার সঙ্গে যোগান ঠিক রাখতে গাছিরা খেজুর রসের সঙ্গে চিনির মিশ্রণে বেশি গুড় তৈরি করছে। পীরগঞ্জের বিরহলীসহ আরো কয়েকটি জায়গায় ভেজাল গুড় তৈরি হয়ে পীরগঞ্জ কলেজ বাজার সেনুয়া বাজার,বোর্ডহাট বাজার, লোহাগাড়া বাজার,ভাবনাগঞ্জ বাজার,জাবরহাট বাজার,নসিবগঞ্জ বাজার,কাতিহার বাজারে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি হচ্ছে। মওসুমের শুরু তেই পীরগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুরের গুড়। অবাধে তৈরি ভেজাল গুড় এক শ্রেণির অর্থলোভী চাষিরা খেজুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। তবে শীতের শুরুতেই নবান্নের আমেজ এখন শহর থেকে প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জের বাড়িতে বাড়িতে চলবে নতুন ধানের চালের গুরায় পিঠাপুলির উৎসব। পীরাজনিত সমস্যা বিশেষ করে শিশুদের ওই ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে লিভারে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ মারাত্মক জটিল রোগ হতে পারে। বাজারে অভিযান পরিচালনা করে এ ধরনের ভেজাল গুড় চাষিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করতে সচেতন মহলের দাবি।সরেজমিন বাজার ও হাটবাজার ঘুরে জানা গেছে, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম বলে খেজুর ও লালী গুড়ে চিনি মেশানো হয়। চাষিরা ভোর বেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে কড়াইয়ে রসজাল করে লালচে বর্ণের হলেই চিনি ঢেলে দিলেই চিনিগুলো রসের সাথে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। চিনি গলে গেলে হাইড্রোজ, ফিটকারী দিলে রস গাঢ় হয়ে গিয়ে গুড়ের রং উজ্জল ও অনেক সুন্দর লাগে। খেজুর রসের সমপরিমাণ লিটার চিনি মিশ্রিত করেছে। বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৫-৫৫ আর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৯০/৯৫ টাকা দরে প্রতি কেজি চাষিরা গুড়ে বেশি দাম পায় ২০ টাকা। পীরগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্টপুর(তাজপুর) গ্রামের জবায়দুর মাস্টার পিবিএন কে বলেন, বর্তমানে হাট বাজারে আমদানীকৃত খেজুর গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড়। তবে কেনার সময় চিনতে পারলেও কিছু করার থাকেনা। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন চিনি মিশ্রিত ছাড়া স্বচ্ছ বা ভালো খেজুরের গুড় পাওয়া দুষ্কর। পীরগঞ্জ বাজারে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২জন পাইকার জানান, খেজুর গুড়ের সেই ঐতিহ্য আর নেই। মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারী ও মহাজনরা ভেজাল গুড় তৈরি করছে। গুড়ের রং ফর্সা ও গুড় শক্ত করতে তারা চিনির সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ এ, এ, এম আবু তাহের পিবিএন কে বলেন, খেজুর গুড়ে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকিরির মতো ভেজাল মিশ্রণের কারণে খাদ্যনালিতে ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ পিবিএন কে বলেন, এই এলাকায় খেজুর গাছের চাষ গুড় উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম কিন্তু অসাদুপায়ে গুড় প্রস্তুতকারকরা বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে গুড় তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে নির্বিচারে ক্রয় বিক্রয় করছে। পীরগঞ্জ উপজেলার হাটবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।