বর্জ্য, যার পরিমান প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং নাগরিক জীবনে দ্রুত বর্জ্যের পরিমান বৃদ্ধির কারনে প্রতিদিন বর্জ্যের পরিমান অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই উন্নয়নশীল দেশের যেকোন শহরের বর্জ্যকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্যই চ্যালেঞ্জ। আর সে প্রতিষ্ঠানটি যখন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মত একটি সিটি কর্পোরেশন হিসেবে নবগঠিত প্রতিষ্ঠান হয় তখন সে চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে পর্বত সমান। যেখানে রয়েছে জনবল এবং বাজেটের অপ্রতুলতা।
ময়মনসিংহ শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ টন বর্জ্য সৃষ্টি হয় যার প্রায়্রি শত ভাগই সিটি কর্পোরেশন শহর থেকে সরিয়ে থাকে। আবার এ বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র। যেমন, গৃহস্থালি বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য ইত্যাদি। এর বাইরে রয়েছে পয়ঃ বর্জ্য।
এইসব বৈচিত্রময় বর্জ্যসমূহের ব্যবস্থাপনায় দুইটি পর্যায় রয়েছে। একটি বর্জ্য সংগ্রহ এবং অন্যটি হলো- সংগৃহিত এই বর্জ্য সমূহের ব্যবস্থাপনা।প্রথম ধাপে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা ঘুরে ঘুরে সিটি এলাকার বর্জ্যসমূহ সংগ্রহ করে। এরপরে আসে সেগুলো ব্যবস্থাপনার প্রশ্ন।
আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রচলিত পদ্ধতি হলো- ওপেন ডাম্পিং। আবহমান কাল ধরে আমাদের দেশে এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে আমাদের এই শহরে ওপেন ডাম্পিং পদ্ধতিতেই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হয়ে আসছে।
ওপেন ডাম্পিং একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি আমরা যখন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ওপেন ডাম্পিং স্টেশন – ময়লাকান্দার পাশ অতিক্রম করি।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক এবং কার্যকর করতে মসিক মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু গত এক বছরে বেশ কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যা এখন খুব সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গত একবছরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মসিক মেয়র কর্তৃক গৃহিত কিছু পদক্ষেপের প্রতি আলোকপাত করা যেতে পারে।
০১. ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সাধারন গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে আলাদা। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি তৈরি করে। ক্লিনিক্যাল বর্জ্যকে তাই অন্য সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্যের মত ওপেন ডাম্পিং ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
মাননীয় মসিক মেয়র তাই সিটি নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই ধরণের বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় তৎপর হন। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরের প্রায় ২৫০ হাসপাতাল/ক্লিনিক থেকে ‘নব ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ক্লিনিক্যাল বর্জ্যসমূহকে পৃথকভাবে সংগ্রহ করে সেগুলো বিধিসম্মত উপায়ে ব্যবস্থাপনা করছে। এর ফলে নিরাপদ থাকছে এই জনপদের জনগোষ্ঠী।
০২. পয়ঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
পয়ঃ বর্জ্য বা মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আকুয়া ওয়ারলেস গেট সংলগ্ন একটি মানব বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এই পরিশোধন কেন্দ্রে বাৎসরিক ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার লিটার তরল মানব বর্জ্য এবং ২ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি কঠিন বর্জ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বাৎসরিক ১৩লক্ষ ৮৩ হাজার ২০০ কেজি মিশ্র সার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।
০৩. বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ময়মনসিংহ শহরে সৃষ্ট বর্জ্যসমূহকে সুব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক বিশ্বের নজিরকে গ্রহণ করেছেন। বর্জ্যকে ব্যবহার করে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণে করেছেন। এর ফলে ময়লাকান্দার ময়লা বা বর্জ্য অদৃশ্য হবে এবং পরিবেশ দূষণ পাবে হ্রাস।
মাননীয় সিটি মেয়র এবং ফিনল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন বর্জ্য প্রয়োজন হবে, যা ময়মনসিংহ শহরে প্রতিদিন সৃষ্ট বর্জ্যের সমান।
অর্থ্যাৎ মাননীয় মেয়রের ভিশন মোতাবেক এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুব শিগ্রি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে ‘শুন্য বর্জ্যের নগরী’ ময়মনসিংহ এর স্বপ্ন।
তদুপরি, বলা হয়ে থাকে যে, অনেক বিষয়ের মত নাগরিক সচেতনতা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়্ও অতীব জরুরী। আমরা যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক স্থানে আমাদের আবর্জনাসমূহকে ফেলি তবে সিটি কর্পোরেশনের কাজ অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। শূন্য বর্জ্যের নগরীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন আমাদের হাত ধরে আরো ত্বরান্বিত হবে।
মসিক প্রেসথেকে সংগ্রহ
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৩৩ কাচারী রোড, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবি সমিতির ৪ ও ৫ নং ভবনের বিপরীত পাশে।
ঢাকা কার্যালয়ঃ কে ৭৪/৫,কোরাতলী এআই ইউবি রোড খিলক্ষেত, ঢাকা, ১২২৯।
যোগাযোগঃ 01917925375 /01736554862 / 01721927699
প্রকাশক: মারুফ হোসেন কমল