চীফ রিপোর্টারঃ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, কমিশন কর্তৃক তদন্তকৃত মামলার শাস্তির হার বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। তিনি আরো বলেন, তদন্ত যদি ঠিকমতো না হয় এবং আদালতে প্রমাণ করতে না পারলে আদালত অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারে না।
দুদক চেয়ারম্যান রবিবার (২০ অক্টোবর ২০১৯) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে দুদক কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও দুদকের যৌথ উদ্যোগে ৭ দিন ব্যাপী মামলা তদন্ত বিষয়ক এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের বড় সমস্যা সক্ষমতার অভাব ও জনবল কম। এজন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ উইং করেছি। জ্ঞান এমন একটি বিষয় যে উভয় উভয়ের কাছ থেকে শিখতে পারে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পারস্পারিক সম্পর্ক তৈরি হবে। আমাদের তদন্তের দুর্বলতার কারণে অনেক সমস্যা হয়। তদন্ত যদি ঠিক মত না হয়, আদালতে প্রমান না করতে পারেন। তাহলে আদালত অপরাধীকে সাজা দিতে পারে না। আমরা যদি শুধু দুদক নিয়ে থাকি, বাহিরের পৃথিবীতে কি হয় সেটা না জানি তাহলে অপরাধীদের সাথে পারা যাবে না। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবসময় আপনাকে আপডেট থাকতে হবে।
দুদকের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, সমালোচনাকে ভয় পাবেন না, কাজ করলে সমালোচনা হবে। ভালো কাজ দিয়ে সমালোচনাকে জয় করতে হবে। আপনাদের সামনে ভবিষ্যত রয়েছে। আমরা ব্যক্তি দেখে পদোন্নতি দেই না, দেখি তার কাজ। আপনারা শুধু ওনাদের কাছ থেকে শিখবেন তা নই, পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে উভয় উভয়ের কাছ থেকে শিখবেন। পুলিশ ছাড়া দুদকের কাজ করা সম্ভব না। এই প্রশিক্ষণ থেকে আপনারা কিছু না কিছু শিখবেন এটা আমার প্রত্যাশা। একটি দেশ থেকে কখনও দুর্নীতি চিরতরে দূর করা যাবে না। দুর্নীতি আছে, দুর্নীতি থাকবে, দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডিএমপি কমিশনারকে আমি চিনি তিনি একজন ভালো ও দক্ষ অফিসার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, মামলা তদন্ত ও অপরাধ দমনে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে ডিএমপি’র সিটিটিসি ইউনিট। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিটিটিসি ইউনিট জঙ্গী দমনে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সিটিটিসি ইউনিটের অভিজ্ঞতা ভালো। এই ইউনিটের কর্মকর্তাগণ দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ইতোমধ্যে নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত তদন্তের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার আহবান জানিয়ে ডিএমপি’র অভিভাবক আরো বলেন, সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির গুরুত্ব শেষ হয়ে যায় এবং নতুন প্রযুক্তি চলে আসে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
ডিএমপি’র সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম(বার) অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিটিটিসি যাত্রা শুরু করে। এটি প্রথাগত ট্রোনিং ইন্সটিটিউট না হলেও বিভিন্ন সময়ে সিটিটিসি ইউনিটের সদস্যদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত ও অপরাধ দমনের উপর ইনহাউজ ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, সেমিনার বা বিষয়ভিত্তিক শর্ট ট্রেনিং করানো হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আমাদের সুফল দিচ্ছে ঠিক তেমনি অপরাধীরা প্রযুক্তিকে নির্ভর করে অপরাধ করছে। আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিনিয়ত দেখছি অপরাধীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সেদিক থেকে সিটিটিসি প্রযুক্তির ব্যবহারকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সাফল্য পেয়েছি, সেই অভিজ্ঞতা দুদকের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে আমরা শেয়ার করবো।
দুদক ও সিটিটিসি’র উদ্যোগে আয়োজিত যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালার অর্থায়ন করেছে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে দুদকের ও ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, দুদক ও সিটিটিসি’র উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশেষায়িত তদন্ত বিষয়ক যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা এক সপ্তাহব্যাপী চলবে। এই কর্মশালায় দুদকের ২৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেছেন।