শেরপুর প্রতিনিধি:
ভালোবাসা অমর! এখনো সত্যিকারের ভালোবাসা রয়েছে, আর এই ভালোবাসাকে মূল্যায়ন করা যায় একমাত্র ভালোবাসা বা ত্যাগের মাধ্যমেই। তারই প্রমাণ দিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মোছা. স্মৃতি আক্তার। তিনি ভালোবাসার প্রিয় মানুষ স্বামী শহিদুল ইসলামকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়ে দিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মোছা. স্মৃতি আক্তার তার খালাতো ভাই একই উপজেলার রাণিগাঁও গ্রামের মোফাজ্জল আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! বিয়ের এক বছর না যেতেই তার স্বামী শহিদুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তার স্বামী শহিদুলের দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নহে। কিন্তু কিডনি কিনে প্রতিস্থাপন করতে যে টাকার প্রয়োজন, তা কোন ক্রমেই শহিদুলের পরিবারের পক্ষে জোগানো সম্ভব নয়। হতাশায় পড়ে যান শহিদুল ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
ভাগ্যক্রমে শহিদুলের সঙ্গে তার স্ত্রী স্মৃতি আক্তারের কিডনি ও রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। চিকিৎসক জানান, স্ত্রী স্মৃতি আক্তার চাইলে তার একটি কিডনি তার স্বামীকে দিতে পারবেন, তাতে কারো কোন প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রী তার একটি কিডনি স্বামীকে দিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং চিকিৎসককে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেন। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতেল শুক্রবার রাতে স্মৃতির একটি কিডনি শহিদুলের শরীরে সফল ভাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে এক স্ত্রীর কিডনিতে বেঁচে গেলো স্বামীর প্রান।
শহীদুলের কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় রক্ত দানকারী আল ইসমার চৌধুরী তার ফেইস বুক প্রোফাইলে এবিষয়ে লিখেন- আলহামদুলিল্লাহ। শহিদুলের কিডনি সঠিক ও সফল ভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। সত্যিই অবিশ্বাস্য মানুষ একজনকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি পর্যন্ত অন্যজনকে দান করতে পারেন; আজ বাস্তব প্রমান পেলাম। আজ মানবতার জয় নিজ চোখে দেখলাম। এই লেখা বিভিন্ন গনমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও ত্যাগের বিষয়ে খবর প্রচার করা হয়। বিষয়টি জেলায় বর্তমান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।