৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ অপরাধ র‍্যাব ৪ এর অভিযানে আনসার আল ইসলামের ৪ সদস্য গ্রেফতার ।
২২, অক্টোবর, ২০১৯, ৫:০৫ অপরাহ্ণ -

সেলিম মিয়াঃ

র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর গাবতলী ও সাভারের আমিন বাজার এলাকা হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর ০৪ জন সদস্য গ্রেফতার ।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর আভিযানিক দল ২০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ রাতে অভিযান পরিচলানা করে রাজধানীর গাবতলী ও সাভারের আমিন বাজার এলাকা হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর নিম্নবর্নিত ০৪ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করেঃ

(ক) মুফতি সাইফুল ইসলাম (৩৪), জেলা-মানিকগঞ্জ।
(খ) মোঃ সালিম মিয়া (৩০), জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া।
(গ) জুনায়েদ(৩৭), জেলা-মুন্সীগঞ্জ।
(ঘ) আহম্মেদ সোহায়েল (২১), জেলা-সুনামগঞ্জ।

৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দেয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ হতে আনসার আল ইসলাম এর বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী সম্পর্কিত বই, ভিডিও, কবিতা, বয়ান, লিফলেটসহ মোবাইল, ল্যাপটপ ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

৪। গ্রেফতারকৃত মুফতি সাইফুল ইসলাম (৩৪) কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে উত্তর বাড্ডায় একটি নৈশ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে। ছাত্র জীবনে সে হরকাতুল জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল। হরকাতুল জিহাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি তার সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়, কিন্তু সবসময় সে সশস্ত্র জঙ্গীবাদ এ অংশ গ্রহনে আগ্রহী ছিল। অন্য দিকে তার প্রাক্তন ছাত্র সেলিমের সহায়তায় একজন সক্রিয় আনসার আল-ইসলাম এর সদস্যের সাথে পরিচিত হয়। ঐ ব্যক্তি তাকে আনসার আল-ইসলামের দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করে। এমনকি সংগঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন প্রটেক্টিভ সফটওয়্যার ও মোবাইল এ্যাপস সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়। সে শীর্ষ জঙ্গীদের মধ্যে একজন, তার ল্যাপটপ এবংমোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদি ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।

৫। গ্রেফতারকৃত মোঃ সালিম মিয়া (৩০) বর্তমানে হাজারীবাগে বসবাস করে। সে ২০০৪ সালে প্রথম ঢাকায় আসে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শেষে বর্তমানে সে একটি লিফট কোম্পানীতে কালেকশনের কাজ করে। ২০১৩ সালে নৈশ মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে সাইফুল হুজুরের সাথে তার প্রথম পরিচয় হয়। সাইফুল হুজুর বিভিন্ন সময়ে উগ্রবাদের কথা বলে। পরবর্তীতে এক ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। সে আনসার আল-ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য। সে আনসার আল-ইসলামের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল এ্যাপস সংগ্রহ করতো এবং সংগঠন পরিচালনা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসছে।

৬। গ্রেফতারকৃত মোঃ জুনায়েদ হোসেন (৩৭) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তার বাড়ী মুন্সিগঞ্জে হলেও বর্তমানে সে সাভার থানার অন্তর্গত হেমায়েতপুরে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং শিক্ষক। ২০১৪ সালে সে তার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। ছাত্র জীবনে সে হরকাতুল জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল। জুলাই ২০১৯ মাসে জনৈক মাহফুজের মাধ্যমে সাইফুল ও সোহায়েল সাথে তার পরিচয় হয়। সাইফুলের কাছ থেকে আনসার আল-ইসলামের সক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে পেরে সে সাইফুলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো এবং তার স্থাপিত মাদ্রাসায় সাইফুল, জনৈক মাহফুজের সাথে নিয়মিত মিটিং এর আয়োজন করে।

৭। গ্রেফতারকৃত আহম্মেদ সোহায়েল (২১), সে একটি মাদ্রাসার মিসকাত জান্নাত শ্রেণীর একজন ছাত্র। সে মাহাদি নামক এক ব্যক্তির সাথে এ্যাপস্ এর মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম দল সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে এবং তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দলে যোগদান করে। সে প্রায় ০৩ বৎসর যাবত এই সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে। পরবর্তীতে সে আনসার আল ইসলাম শীর্ষ নেতার সাথে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল।

৮। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তারা গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে, তাদের মতে এই ব্যবস্থা তাগোদি বা বাতিল, তারা ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় যারা প্রতিহত বা বিরোধ সৃষ্টি করে তাদের চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। দেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করাই আনসার আল ইসলামের মূল উদ্দেশ্য। তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা কারীদের উপর তারা আকশ্মিক আক্রমন করে কঠোর শাস্তি বা টার্গেট কিলিং করে থাকে। টার্গেট কিলিং এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে চাপাতি ব্যবহার করে। জঙ্গী তৎপড়তা, প্রশিক্ষণ ও করনীয় সম্পর্কে তারা নিজেদের মধ্যে অনলাইনে Protective Apps, Protective Text, Protective Browser এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে। নিয়মিত ভাবে তাদের সদস্যদের কাছ থেকে মেহেনতের মাধ্যমে ইয়ানত সংগ্রহ করে। তারা নির্ধারিত ফর্মেটে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন ও অগ্রগতি আমির এর নিকট দাখিল করে। যেমন-কয়জন নতুন সদস্যকে বয়ান দেওয়া হয়েছে, কোন ফান্ড বা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি। এই দলের সদস্যরা এন্ড্রয়েট মোবাইল বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রটেক্টিভ এ্যাপস্, ম্যাসেঞ্জার ও ব্রাউজার ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে উগ্রবাদী সংবাদ, বই, উগ্রাবাদী ব্লগ, উগ্রবাদ উৎসাহ মূলক ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। তার কাট-আউট মেথড অবলম্বন করে বিধায় এদের সনাক্ত করা কঠিন এবং সহজে কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে না, ফলে কেউ কাউকে চিনেনা। তবে কোন নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষন, গোপনীয় তথ্য সরাবারহ ও গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে কদাচিৎ দেখা সাক্ষাৎ করে থাকে। শিঘ্রই কোন নাশকতার পরিকল্পনা জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীরা সাভারের আমিন বাজার এলাকায় তাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য জানতে পেরে তাদেরকে ২০ অক্টোবর রাতে গাবতলী ও আমিনবাজার হতেগ্রেফতার করে নাশকতার পরিকল্পনা নশ্মাত করা হয়। এ সময় তাদের দলের আরো বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। পলাতক জঙ্গীদের সমন্ধে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক গেফতারের প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে।

৯। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।