ময়মনসিংহ অফিস: ২০০৪ সালের ২১আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় শহীদদের বিদেহী অাত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি কৃষিবিদ ড.সামীউল আলম লিটন।
ড.সামীউল আলম লিটন এক শোকবার্তায় বলেন,
আজ ২১ শে আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ১৬ তম বার্ষিকী।২০০৪ সালের আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় রক্তমাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশ স্থল। নিশংস এই গ্রেনেড হামলায় ৩৪ জন নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণ নিহত হন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ আহত হন প্রায় ৩০০ জন। তে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কাল পথ। প্রাণ বাঁচানোর জন্য আকুতিসহ কাতর অার্তননাদসহ অবর্ণনীয় ও মর্মান্তিক ছিল সেই দৃশ্য। তবে দলের নেতাকর্মী ও দেহরক্ষীদের আত্ম থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ভয়ঙ্কর এই গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেট জননেত্রী শেখ হাসিনা। মানববর্ম রচনা করে জীবনরক্ষা প্রিয় নেত্রীকে উঠিয়ে দেন তার সহকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ঘাতকচক্র তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। সৌভাগ্যবশত গুলিবর্ষণ থেকেও প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।আরও নিহত হন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো দেশে অসংখ্য স্পিন্টারের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পথ চলছেন আহত নেতা-কর্মীদের অনেকেই।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের যোগসাজশে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সরাসরি হামলার এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আগে কখনো দেখা যায়নি। তৎকালীন বিএনপি জামাতের চারদলীয় জোট নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় মদদে এই গ্রেনেড হামলা সংগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে মামলাটির বিচার চলাকালে দেখা গেছে জঙ্গিরা কিভাবে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছিল। হামলার পরপরই জঙ্গিদের পালিয়ে যেতে দিতে বা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা রেখেছিল, তাও ছিল নজিরবিহীন। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হামলার আলামত তদন্ত কর্মকর্তারা অতিউৎসাহী ভূমিকা রেখেছিলেন। এখন প্রমাণিত তদন্তের নামে প্রহসনের মাধ্যমে কিভাবে একজন জজ মিয়া নাটক তৈরি করেছিল রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থা। বস্তুত আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক জিঘাংসা একাকার হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক বিরোধিতা গ্রেনেড মেরে স্তব্ধ করে দেওয়ার এই নিশংস প্রচেষ্টা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রয়েছে। আশার কথা এই যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ষড়যন্ত্রে জড়িত এদের বেশিরভাগ ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে জরুরি যে এই অঘটন থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস পালন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের এই রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহারের এই কলঙ্ক আর যেন আমাদের রাজনীতিতে ফিরে না আসে। আমরা মনে করি আইন বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে এই নাটকের কুশীলবদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার জরুরী।
একুশে আগস্ট ট্রাজেডির দুঃসহ স্মৃতি এখনও বাংলার মানুষকে তাড়া করে ফেরে। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এই বাংলার মাটিতে যে ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে সমূলে বিনাশ করতে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছিল, সেই চক্রের দোসররা আবারো একুশে আগস্ট ২০০৪ এ সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার একজন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালায় স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। ছদ্মবেশী ষড়যন্ত্রকারীরা এখনি শেষ হয়ে যায়নি, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুযোগ সন্ধানীরা। একটি পচাত্তরের ধকল সামলাতে জাতিকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। সোনালী যুগের প্রবেশের অপেক্ষায় সমগ্র জাতি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ইত্যাদি ইতিবাচক বিষয় গুলোর কারণে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা পেয়েছে। দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও স্বাধীনতার আদর্শ রক্ষার স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন অন্যতম করণীয় কাজ। জাতিকে যেন আর পিছনে ফিরে তাকাতে না হয় অতি সতর্কতার সাথে এগুতে পারলেই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়।