তথ্য প্রতিদিন = আমার মনে আছে ১৯৬৬ সালে আমাকে তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে পাঠানো হলে মোনায়েম খান আমাকে ডিভিশন দিয়েছিলেন। সেই শীতের রাতে ঘটি-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল। প্রচণ্ড শীতে দেখলাম চাল চলে এসেছে, ডিম চলে এসেছে। কে পাঠিয়েছে? বঙ্গবন্ধু পাঠিয়েছেন।
‘বঙ্গবন্ধু তার লেপ ও বালিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। একমাস ছিলাম। সেই সময় ঈদ ছিল। কারাগারের মধ্যে তার সঙ্গে ঈদ কাটিয়েছি। আমার বাবা তখন স্পিকার আর আমি তখন ডাকসুর ভিপি। মাত্র আমার লেখাপড়া শেষ হয়েছে। তার কারাগারের রোজনামচায় তা উল্লেখ আছে। ’
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন একথা বলেন।
অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
রাশেদ খান মেনন বলেন, একইভাবে ১৯৬৭ সালে আবার যখন আমরা জেলে গেলাম তখন আমি রুমে ছিলাম। সেই সময় রটে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হবে। জেলখানায় ইতোমধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মধ্যে কামাল উদ্দিন, সিকদার উদ্দিনদের জেলে নিয়ে আসা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও আমার আরেকটি মামলা ছিল। আমাকে প্রায় প্রতিদিন বাইরে কোটে যেতে হতো। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জেলের রাজা। তাকে কেউ আটকাতে পারতো না। তখন তিনি ওই গেটে এসে দাঁড়াতেন, আমাকে দিয়ে খবর পাঠাতেন। বাইরের খবর নিতেন।
‘এ কথাটা আমি স্মরণ করছি এই কারণে যে, বঙ্গবন্ধু ওই সংকটকালে আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। আমার মনে আছে, ঈদের দিন তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে ঈদের মাঠে গেলেন। তিনি যেতে যেতে আমাকে বললেন, ‘দেখ মেনন ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ওরা ষড়যন্ত্র করছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু আমি মাথানত করবো না। ’
‘তার কিছুদিন পরেই ১৭ জানুয়ারি তাকে নেওয়া হলো ক্যান্টনমেন্টে, জেলখানায় আর রাখা হলো না। বাঙালি জাতির স্বাধীনতাই বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল।’
mp news