শুদ্ধি অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে
তথ্য প্রতিদিন কম – শুদ্ধি অভিযানের কেবল শুরু। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকজনকে অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুদ্ধি অভিযানের জালে ধরা পড়বে বিভিন্ন দলের অনেক বাঘা বাঘা নেতা। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলসহ উচ্চ পর্যায়ের বেশ ক’টি বৈঠকে জঙ্গি ও মাদকের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও নিজের জিরো টলারেন্সের কথা বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রগুলো জানায়, এ অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং এর বিচার প্রক্রিয়ায় আলাদা ট্রাইব্যুনালও হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিকিউরিটি ইউনিটসহ বেশ কিছু সরকারি সংস্থা এ অভিযানে আরও বেশি যুক্ত হবে।
অভিযুক্তদের বিষয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকের অর্থের হিসাব চেয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনও সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে অন্তত দেড়শ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
বিগত নির্বাচনের অনেক আগ থেকেই প্রধানমন্ত্রী এমন একটি অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বেতনও বাড়িয়েছেন। যেন সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে না জড়ান। নির্বাচনের আগে কয়েকজন এমপিকেও দুদক তলব করেছিল। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এ অভিযান পুনরায় শুরু হয়েছে। এ অভিযানের আওতায় সাবেক ও বর্তমান অনেক প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীও ধরা পড়বে।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ অভিযান শুরু হয়। তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিলেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যেই নড়েচড়ে ওঠে এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। এরই মধ্যে তিন সংসদ সদস্যসহ ২৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন বিতর্কিত ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহসভাপতি আরমান হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান), তারেকুজ্জামান রাজীব প্রমুখ। তিন সংসদ সদস্যসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। নজরদারিতে আছে শতাধিক নেতা।
রাজনৈতিকভাবেও দলকে পরিশুদ্ধ করার কাজে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানে দুর্র্নীতিবিরোধী বিশেষ আদালতও গঠন করা হতে পারে। বিএনপির দুর্নীতিবাজ নেতাদেরও এর আওতায় আনা হতে পারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রমাণ করবেন অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে আছেন। এই শুদ্ধি অভিযান শুধু আওয়ামী লীগের লোকের বিরুদ্ধে নয়, বিএনপির কে কী করেন, সবার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, কে কোথায় বসে কোন অপকর্ম করছেন, অপরাধ করছেন, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সময়মতো টের পাবেন, বুঝতে পারবেন। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেত্রী ঘরেরটা শেষ করে পরকে ধরবেন। সব আসবে। সব অপরাধী ধরা পড়বে এই জালে। সব অপকর্মকারী ধরা পড়বে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে আগামী মাস থেকে। আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। এ ব্যাপারে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ২৪ অক্টোবর তিনি প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন। চিঠিতে জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গড়া নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের পদায়নের বিষয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান এখনও শুরু হয়নি। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড সম্মেলন হবে। এ জন্য ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যসব জেলার দিনক্ষণও দ্রুতই ঠিক করা হবে। আর এ সম্মেলন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়া হবে। তবে দলীয় এমন সিদ্ধান্তের পরও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলোচিত সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীকে আবারও দলের সাধারণ সম্পাদক করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।