৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১, সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ - প্রতিনিধি:

মারুফ হোসেন কমলঃ

 

 

 

গোরাপত্তনঃ মহান জিন্দাপীর দস্তগীর হযরত শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ.)-এর প্রথম পুত্র জন্ম গ্রহণ করার পর তিনি তদীয় মহান মুর্শিদ কেবলাগাহ হযরত ওয়াজেদ আলী মেহেদিবাগী (রহ.)-এর পবিত্র দরবার কলিকাতার মেহেদীবাগস্ত গোবরা শরীফে ছুটে গেলেন। হযরত সৈয়দ হুজুর তাঁর আগত প্রথম পুত্রের নামকরণ করলেন “খাজা মুহাম্মদ হাশেম উদ্দীন (রহ.)”। মহান সাহেবে কাশফ হযরত সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদিবাগী (রহ.)-পর মুহুর্তেই ফরমালেন, “বাবা ইউনুস! এরপর তোমার একটি মহান পুত্ররতœ জন্ম গ্রহণ করবে। আমি তখন দুনিয়ায় থাকি কিনা। তাই আজকেই তাঁর নাম রেখে দিলাম ‘খাজা মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন’। এরপর তিনি আরও ফরমালেন,“বাবা ইউনুস! তুমি জেনে রেখো তোমার এ পুত্র রতœটি বহুবিদ খোদাপ্রদত্ত গুণের অধিকারী হবে”। এমনিভাবে দুনিয়াতে আসার পূর্বেই তাঁর নাম মোবারক রাখা হয় ‘খাজা ছাইফুদ্দীন’ বা ধর্মের তলোয়ার। তিনি মাদারজাদ (জন্মগত) অলি আল্লাহ। তিনি যে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হবেন তা তাঁর জন্মপূর্ব এবং জন্মকালীন অবস্থা ও লক্ষণাদি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সমন্ধে তাঁর পূণ্যবতী  মাতা হযরত বেগম গোলেনূর (রহ.) স্বীয় রচিত “খাতুনে জান্নাত” পুস্তকে “আমার দ্বিতীয় ছেলে প্রসঙ্গে” অধ্যায়ে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ইঙ্গিতবহ স্বপ্ন ও লক্ষণাদির কথা লিপিবদ্ধ করেছেন।

হযরত শাহ্ শম্ভুগঞ্জী (রহ.) সাহেব জন্ম গ্রহণ করার পর গাউছুল আযম শাহ্ এনায়েতপুরী পীর কেবলাজান বহির্বাটিতে জসসমক্ষে এসে ঘোষণা করলেন, “বাবা সকল! লিখে রাখুন তরিকতের ইমাম জন্ম নিলেন।” তৎপর ফরমালেন, “ইমাম সাহেবের আস্তানা হবে নদীর পূর্বপারে তাঁহার ঘর লাল। তাহার পার্শ্বে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় আছে। চতুর্দিকে রাস্তা দ্বারা ঘেরাও করা।” দিব্যজ্ঞানী মহাপুরুষ শাহ্ সূফী এনায়েতপুরী (রহ.) এর এ ভবিষ্যদ্বাণীটির সঙ্গে  বর্তমান শম্ভুগঞ্জ লালকুঠি দরবার শরীফের হুবুহু মিল রয়েছে। এনায়েতপুরী হুজুর আরো ফরমিয়েছিলেন, ময়মনসিংহে একজন মহান অলী আল্লাহর আবির্ভাব হবে।

 


জনাব এম মকবুল হোসেন লিখেছেন-“এইরুপে বার বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পরে উপরওয়ালার নির্দেশে (এলহামে) ও হযরত বড় পীর আম্মার আদেশে মেজো হুজুর মাওলানা খাজা মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন সাহেব সমাজকে আল্লাহর পথে শিক্ষা দেওয়ার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলায় শম্ভুগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্বপাড়ে তশরীফ নেন ১৯৬৩ সালে ২২ শে নভেম্বর। সেখানে অবস্থান করিয়া তিনি অসংখ্য মানুষকে আল্লাহর পথে শিক্ষা দিতেছেন। মনে হয় আমাদের জাকের সমাজের ভাগ্যাকাশে নতুন উদীয়মান চাঁদের মত ফয়েজ রুপী ¯িœগ্ধ কিরণদান করিতেছেন। আশেক জাকেরদল ও বহু লোক তাঁহার নিকট থেকে আল্লাহর নামের সুমধুর ফয়েজ রুপী পিযুষ ধারা পান করার জন্য ভ্রমরের মত ছুটে আসছে।” তিনি আরো লিখেছেন “কে আছ ভাই খোদা রাসূলের আশেক। কে আছ নশ্বর ভূবনের মায়া ভুলে আল্লাহর প্রেমের মদিরা পান করতে, এসো যাই-সেই খাজা বাবার নূরানী চেহারা, গলার সুর হাতের আংগুল, পায়ের গঠন, চোখের চাহনী, মুখ মোবারক, শরীরের নূরানী চেহারা যে বীরযোদ্ধা মহামানব (খাজা শম্ভুগঞ্জী) কেড়ে রেখে নিয়েছেন অফুরন্ত বিভু প্রেমসহ-তাঁরই দরবারে শামিল হয়ে নিজকে গৌরবান্বিত করি।”-(খাজা বাবার অন্তর্ধ্যান ও সুলতানুল ত্বরিকতের অভ্যূত্থান গ্রন্থ দ্রঃ)
লালকুঠি হিজরতের পূর্বে বর্তমান শম্ভুগঞ্জ লালকুঠি দরবার শরীফের উত্তর পার্শ্বে শাহ মেছের ফকির নামে এক কাশ্ফ খোলা (অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন) ফকির বাস করতেন। শম্ভগঞ্জী হুজুর কেবলার আসন্ন হিজরত সম্পর্কে তিনি অন্তর্দৃষ্টিতে অবহিত হয়েছিলেন। তিনি হুজুর কেবলাজানের হিজরতের কয়েক বছর আগে থেকেই উপস্থিত লোকদের সম্মুখে বলতেন, “আমার আর এখানে থাকা  চলবেনা, লাল নিশান দেখা যায়, ইমাম সাহেব আসছেন।” অত্র এলাকাবাসী প্রবীণ গণ্যমান্য অনেকেই একথা জানেন। শম্ভুগঞ্জ দরবার শরীফের দারোয়ান মোঃ কমর উদ্দীন সাহেব একথা বহুবার হুজুর কেবলা ও অন্যদের নিকট ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর উক্ত ফকির সাহেব লালকুঠি দরবার শরীফের উত্তর দিকে শম্ভুগঞ্জ গোদারা ঘাটে পুুরাতন বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার উত্তর পার্শ্বে দিয়ে স্বীয় আস্তানা গাড়েন এবং সেখানেই তাঁর মাজার শরীফ বিদ্যমান আছে।

এ সময় মোঃ মাহতাব উদ্দিনের পিতা মোঃ আবদুল জব্বার, হরিপুর শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ স্বপ্নে দেখেন যে, এনায়েতপুরী হুজুর পাক ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে বালুর চরে এসে দাঁড়ালেন। তখন তিনি (জব্বার সাহেব) তাঁকে কোলে করে নিয়ে লালকুঠির পার্শ্বে বসালেন।

 

 

লালকুঠির ইতিহাসঃ
লালকুঠির নির্মাণকাল গাত্র ফলকে খোদিত দেখা যায় ১৯২২ ইং সন। বৃটিশ ডেভিট কোম্পানী কর্তৃক নির্মিত এ দালানটি ছিল কোম্পানীর পাাটের অফিস। গেসপ্যাল সাহেব ছিলেন ইহার ম্যানেজার। ঋণের দায়ে এটি তিনি আশি হাজার টাকায় মিঃ বীরেন সেনের নিকট বিক্রি করে দেন। এ সময় বৃটিশদের সঙ্গে জার্মান ও জাপানের মহাযুদ্ধ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) শুরু হয়। এক পর্যায়ে তখন এ লালকুঠি বৃটিশদের দখলে চলে যায়। যুদ্ধ চলাকালে বৃটিশদের এ ঘরটিকে ট্রেজারী হিসেবে ব্যবহার করে। যুদ্ধে বৃটিশরা জয়লাভ করলে বীরেন সেন তাদের নিকট থেকে লালকুঠির ভাড়া বা ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা পান। পরে বীরেন সেনের নিকট থেকে রমেশ বাবু মাত্র পঁচিশ হাজার টাকায় এ লালকুঠি খরিদ করে নেন। উক্ত রমেশ বাবুর নিকট থেকে বাড়ীটি হুজুর কেবলাজান (রহ.) ক্রয় করে নেন। আর এ ক্রয় বিক্রয়ের কাজটির পেছনে অসামান্য অবদান রাখেন খাজা বাবার আশেক পাগল জাকের মরহুম মাগফুর ইয়াকুব আলী, জুবিলি ঘাট-ময়মনসিংহ।

 


লালকুঠির বিক্রেতা মিঃ রমেশ বাবু বলেছেন, একদিন জনৈক সাধু-সন্যাসী ব্যক্তি লালকুঠিতে এসে রমেশ বাবুর নিকট কিছু খাবার চাইলেন। রমেশ বাবু তাকে যথা সম্ভব উত্তম খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে সন্যাসী রমেশ বাবুকে জিজ্ঞেস করলেন এ বাড়ীটি কার? রমেশ বাবু বললেন, এ বাড়ী আমার। তখন সন্যাসী বললেন, “না-না, এ বাড়ী তোমার নয়-এ বাড়ী তীর্থস্থান হবে।” রমেশ বাবু বর্ণনা করেন যে “হুজুর পাকের তরফ থেকে যখন এ বাড়ী কেনার প্রস্তাব আসলো, তখন সেই সাধুর কথা আমার স¥রণ হলো এবং আমি বুঝতে পারলাম যে এ বাড়ী সত্যিই তীর্থস্তান হতে যাচ্ছে। কাজেই  আমি কোন রকম দর কষাকষি না করেই এ বাড়ীটি হুজুর পাকের নিকট বিক্রি করে দিলাম।” বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার এক কেন্দ্র ভূমি শম্ভুগঞ্জ লালকুঠি দরবার শরীফ। কি উত্তম স্থানই না নির্বাচন করেছিলেন স্বর্গীয় মহাপুরুষ শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ.)।

 

লালকুঠি দরবার শরীফের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত ময়মনসিংহ জুট মিলস। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জনাব এম. এ মোনেম খান হুজুর কেবলাকে সঙ্গে নিয়ে এর শুভ উদ্ভোধন করেছিলেন। এদিন তিনি জুটমিল সহ এলাকাবাসীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্য দোআ করেছিলেন। বর্তমান ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে এর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ এলাকাটি শহরটিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। এ মহান অলির কদম স্পর্শে স্থানীয় অনেক ভক্ত মুরীদে পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগে উন্নীত হওয়ায় এ জায়গাটি অধিকতর  উন্নত পর্যায়ে রুপান্তরিত হচ্ছে।

 

 

লালকুঠির পারিপার্শ্বিক অবস্থা তখন আদৌ ভাল ছিল না। নানাবিধ দূর্নীতি অনাচার আর অপকর্ম আশে পাশে প্রতিনিয়তই সংঘটিত হতো। এমনিতর পরিবেশে হুজুর কেবলা (রহ.) ১৩৭০ সনের ১৮ই ফালগুন প্রথম লালকুঠি ওরছ মোবারক উদযাপন করেন। হুজুর কেবলার লালকুঠি দরবার শরীফে হিজরতের খবর জাহের-বাতেনে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো। কেউবা স্বপ্নে, কেউ বা কাশফে, কেউবা এনায়েতপুরীর ছুরতে, কেউবা খুদ শম্ভুগঞ্জীকে স্বপ্নে দেখতে পেয়ে হিজরত সম্পর্কে অবহিত হল। এ বালুর চরের নবীন পরিেেবশে হুজুর কেবলাকে দেখার জন্য আস্তে আস্তে লোকজন আসতে লাগলো। (স্বয়ং হুজুর কেবলার জননী) দেখতে পেলেন যে, এনায়েতপুরী হুজুর লালকুঠিতে শুয়ে আছেন। এ স্বপ্ন দেখার পর তিনি শম্ভুগঞ্জ দরবার শরীফে তশরীফ আনয়ন করেছিলেন। মাওলানা ওয়াজেদ আলী সাহেব, নেত্রকোণা, ও মাওলানা জাওয়ানী সাহেব উভয়ে স্বপ্ন দেখলেন যে, হুজুর কেবলা ব্রহ্মপুত্র নদের বালুর চরে একটি বাড়ীতে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে উপবিষ্ট আছেন। এ স্বপ্ন দেখার পর তারা উভয়েই লোক মুখে হুজুরের সদ্য হিজরতের কথা শুনে শম্ভুগঞ্জ দরবার শরীফে ছুটে এসে হুজুর পাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে আস্তে আস্তে ধর্ম পিপাসু লোকেরা পংগপালের মত ছুটে আসতে লাগল লালকুঠির নূরের দিকে।
প্রথম বছর পনের বিশ হাজার দ্বিতীয় বছর ওরছ শরীফে পঁচিশ ত্রিশ হাজার লোকের সমাগম হয়। আস্তে আস্তে মোছতাহছান (পূণ্যজনক) অনুষ্ঠান ওরছ মোবারকে লোক সংখ্যা বেড়ে লাখের কোঠা ছেড়ে গেল। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ লোক দলে দলে এসে হাজির হয় লালকুঠি ওরছ মোবারকে।

 

 

আধ্যাত্মিক জগতের মহান ইমাম লক্ষ লক্ষ আশেক মুরীদানের নয়নমনি এ মুর্শিদে বরহক স্বীয় কুতুবিয়াত তথা মুজাদ্দেদিয়াতের দায়িত্ব পরিপূর্ণ সফলতার সহিত পালন করে পঁচাত্তর বৎসরাধিক কর্মময় জীবন অতিবাহিত করে বিগত ১৪০২ বাংলা সনের ৩০ শে আশ্বিন; ১৪১৬ হিজরীর ১৯ শে জামাদিউল আউয়াল; ১৯৯৫ইং সনের ১৫ই অক্টোবর রোজ-রবিবার বেলা ১টা ৪৫মিনিটে তাঁর সেই পরম বন্ধু রফিকে আলা’-এর সঙ্গে মিলনের উদ্দেশ্যে ইহধাম ত্যাগ করে দারুল বাকায় তশরীফ নেন। ইন্নালিল্লাাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এ নশ্বর জহতে তাঁর পবিত্র আয়ুষ্কাল ছিল ৭৫ বৎসর ৯মাস ৭দিন ২০ঘন্টা ৪৭মিনিট।

 

সন্ধ্যার দিকেই রেডিও বাংলাদেশ থেকে এ মহা শোক সংবাদটি প্রচার করা হয় এবং রাত ১১টায় হুজুর কেবলাজান (রহ.)-এর ফটো মোবারকসহ বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক সংবাদ প্রচার করা হয়।

ইন্তেকালের দেড়মাস আগের কথা। হুজুর কেবলাজান (রহ.) দরবার শরীফে পায়চারী করছিলেন। এ সময় হুজুর পাকের ¯েœহভাজন মুরীদ মাওলানা মোঃ আব্দর রশিদকে উদ্দেশ্য করে ফরমালেন, “তোমরা নার্সারী থেকে কিছু ভাল রং-এর পাতাবাহার কিনে আন”। বর্তমানে যেখানে মাযার শরীফ বিদ্যমান সে স্থানের দিকে পবিত্র আঙ্গুলি মোবারক দ¦ারা ইশারা করে ফরমান, “এই স্থানে ফুলের বাগান হবে।” আব্দুর রশিদ বললেন, হুজুর! এ জায়গা তো নীচু জমি; পানি জমে থাকে-পাতাবাহার বা ফুলের চারা কিনে লাভ কী বর্ষা এলেই মরে যাবে। তখন হুজুর পাক (রহ.) ফরমালেন-“তুমি জাননা, আশ্বিন মাসের শেষে জাকেররা এসে এ স্থানে মাটি কেটে উঁচু করে বাগান তৈরি করবে।” ৩০শে আশ্বিন দেখা গেল অসংখ্য আশেক জাকের চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে এ স্থানটি মাটি কেটে ভরাট করে (উঁচু করে) নীচ থেকে ইটের গাঁথনি দিয়ে ১৩ ফুট উঁচু করে তাদের প্রাণ প্রিয় মাশুকের জন্য রিয়াজুল জান্নাহ বা বেহেস্তের বাগান রওজা মোবারক তৈরি করলো। বর্তমানে রওজা পাকের তিন দিকে ফুলের বাগান এবং রঙ্গীন পাতাবাহারের সমাহার রয়েছে-যা তিনি ইন্তেকালের পূর্বে বলে গিয়েছিলেন।

পীরজাদা খাজা মুহাম্মদ আলাউল হক (অলি) হুজুর পাকের বিবৃতি ঃ হযরত খাজা বাবার কনিষ্ঠ সাহেবজাদা হযরত খাজা মুহাম্মদ আলাউল হক (অলি) হুজুর বর্ণনা করেন যে, একবার আমি ছাত্র জীবনে লালকুঠি দরবার শরীফের উপর তলায় ডাইনিং রুমে খাবার গ্রহণকালে মনে মনে ভাবছিলাম, এ দুনিয়ায় তো সবাই একসাথে থাকি কিন্তু পরকালে কে কোথায় থাকবে তার তো আর কোন নিশ্চয়তা নেই। ঠিক এমন সময় আব্বা হুজুর উপর তলায় ঢুকছিলেন। আমি আদব রক্ষার্থে উঠে দাঁড়ালাম। আব্বাজান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ “এখানে আমরা যে ভাবে এক সাথ আছি পরকালেও এভাবে এক সাথে থাকব। বলাবাহুল্য যে, এখানে পীরজাদা হুজুরের জল্পনা কল্পনার কথা পীর কেবলাজান অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে জেনেই উক্ত জবাব দিয়েছিলেন। কোরআনুল কারিমের নি¤েœাক্ত আয়াত শরীফে হযরত খাজাবাবার এ কথার সমর্থন মিলেঃ (আরবী)
অর্থাৎ, যারা ঈমানদার তাদের সন্তানগণও তাদেরই অনুগামী হবে জন্মগত ঈমানের কারণে। আমি (আল্লাহ) তাদের সন্তানগণকে তাদের সাথে (জান্নাতে) একত্রিত করবো। (সূরা তুর, আয়াত-২১) উক্ত পীরজাদা হুজুর বললেনঃ একবার আমার ছাত্র জীবনে আব্বা হুজুর আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “অলি! তুমি লাখ বাগ কী জান ?”  (ছোট সাহেবজাদার ডাক নাম অলি) আমি বললাম, জী না আব্বা আমি লাখ বাগ কী জানিনা। তখন আব্বা হুজুর হেসে দিয়ে বললেন, “মোঘল বাদশাহ এক লাখ আমের (আম গাছের) বাগান করেছিলেন-এটাকেই লাখ বাগ বলা হয়।” আশ্চর্যের বিষয় হলো একথা বলার অন্তত ২৫/৩০ বছর পর (খাজা বাবার ইন্তেকালের পর) উক্ত পীরজাদা হুজুর লালকুঠি দরবার শরীফের আঙ্গিনায় আম ও লিচুর সিজনে বিভিন্ন গ্রাম থেকে (অসংখ্য) আম ও লিচুর চারা সংগ্রহ করে এতে উন্নত জাতের আম গাছের গ্রাফটিং করে উক্ত চারা গাছ গুলো শত সহস্র মুরিদ অর্থাৎ জাকের ভাইদের মধ্যে বিনা মূল্যে সরবরাহ করছেন। তারা এ গুলো নিজ নিজ বাড়ীতে বপন করে বড় এবং উন্নত মিষ্টি জাতের আমের ফলন পাচ্ছেন। এ কাজ চলমান রয়েছে এবং এতে লাখ বাগ ক্রমান্বয়ে হবেই। বলা বাহুল্য উক্ত পীরজাদা হুজুরের ভবিষ্যতের প্রশংসনীয় এ বিরাট কর্ম উদ্যোগের বিষয়টিই হযরত খাজা বাবার অন্তর্দৃষ্টিতে ভেসে উঠেছিল বলেই তিনি তাকে লাখ বাগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

 

 

পীরজাদা খাজা ছোট হুজুর পাক লালকুঠি পাক দরবারের আনাচে কানাচে অত্যন্ত যতনে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালির এক সুশৃঙ্খল বৃক্ষের সমারোহ সাজিয়েছেন। পরম যতনে ও মহব্বতে একজন অতুলনীয় আধ্যাত্মিক স্থপতির স্মরণীয় নিদর্শন গড়েছেন- আধুনিক সুসজ্জিত “আল্লাম শাহ্ সূফি খাজা মুহাম্মদ ছাইফুদ্দিন (রহ.) জামে মসজিদ স্থাপন, মাশুক পরম শ্রদ্ধাভাজন আব্বাজান পীর কেবলা (রহ.) এর মাজার শরীফ স্থাপন এবং পরম শ্রদ্ধাভাজন মাতা পীর আম্মাজান (রহ.) এর মাজার শরীফ এর সার্বিক তত্ত¡াবধান ও ডিজাইন  করে। এইসব স্থাপনার মাধ্যমে হয়েছেন ভূয়সী প্রশংসীত দেশ বিদেশের সরকারী দপ্তরের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীগণ কর্তৃক। এছাড়াও জনকল্যাণমূলক ও সংস্কৃতি মনার নজির রেখেছেন আরো কিছু প্রশংসীত স্থাপনা কর্মের মাধ্যমে। যেমনঃ- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কে গড়েছেন ভাস্কর্য নামকরণ করেছেন “রুপ মুকুর” লিখেছেন বানী চিরন্তন, ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে রোপন করেছেন পাম বৃক্ষ এবং নামকরণ করেছেন “বসন্তী গালিচা” লিখেছেন মরমিক কবিতার চরণ এবং মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ডে রোপন করেছেন পাম বৃক্ষ নামকরণ করেছেন “পান্থ কানন” এবং লিখেছেন মরমিক কবিতার চরণ। এছাড়াও আধ্যাত্মিক জগতের সাধক ও একজন সফল মরমিক কবি ও লেখক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশ ও সুইডেনের একদল বিশিষ্ট লেখক ,সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের সম্মলিত ভাবে প্রকাশিত ম্যাগাজিন “অনুশীলন” এ “অরুদ্ধ এক নদীর গল্প” কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। এই মহান গরীবের বন্ধু মহান সাধকের ইতিমধ্যে দুটি অডিও এ্যালবামসহ মোট তিনটি মরমিক গজলের এ্যালবামের কপি রাইট সার্টিফিকেট অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের দপ্তর থেকে। এখনো তাঁর অনবদ্য মজাহাবিক খেদমত, সাহিত্য রচনা এবং আধ্যাত্মিক সাধনা অব্যাহত রয়েছে।