তাহমিনা জান্নাত, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের মুঠি। এলাকায় একে বাংলা বারুদও বলা হয়ে থাকে।
উপজেলার সর্বত্র রাস্তার ধারে বাড়ির আঙ্গিনায় গৃহবধূরা পাটকাঠি কিংবা বাঁশের শলায় গোবর মুঠিয়ে লাঠির মত করে সাজিয়ে রোদে শুকিয়ে রান্নার কাজে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। গোবরের তৈরি এই লাকড়ি চুলায় দাউ দাউ করে বারুদের মতো জ্বলে বলে গৃহিণীরা কেউ কেউ এর নাম দিয়েছেন বাংলা বারুদ।
উপজেলার নিজতুলন্দর গ্রামের গৃহবধূ হোসনেয়ারা বেগম (৬০) জানান, মাত্র ৭ থেকে ১০টি বারুদ কাঠি দিয়ে অনায়াসে ভাত তরকারি রান্না করা যায়। বাংলা বারুদ দিয়ে রান্না করে গৃহিণীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একটি বাংলা বারুদ চুলায় দিলে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জ্বলতে থাকে। এসময় গৃহিণীরা হাতের অন্যান্য কাজও সেরে নিতে পারেন।
শিমরাইল গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মিনা বেগম (৫০) জানান, এক সময় শুধু দরিদ্র পরিবারের গৃহিণীরা খোলা মাঠ থেকে গোবর কুড়িয়ে এনে এসব মুঠি তৈরি করতেন। ইদানীং এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ধনী-ঘরের গৃহিণীরাও তাদের গোয়ালের গোবর দিয়ে এ বাংলা বারুদ তৈরি করছেন। বাংলা বারুদ দিয়ে রান্না করায় তাদের কাঠের লাকড়ি ও গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয় না।
কুমড়াশাসন গ্রামের নুর জাহান (৪০) জানান, আমরা শুকনো মৌসুমে মুঠি তৈরি করে শুকিয়ে ঘরে মজুদ করে রেখে দেই। বর্ষাকালে লাকড়ির খুব অভাব হয়। এ সময় কাঠের লাকড়ি ও সিলিন্ডার কেনার মত টাকা থাকে না। শুকনো ঝরা পাতাও পাওয়া যায় না। এ দুঃসময়ে বাংলা বারুদ অনেক উপকারে আসে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু সাদাত মোঃ সায়েম জানান, গোবরের মুঠি দিয়ে রান্না বান্নায় কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই। তবে গোবরে আছে মিথেন গ্যাস। তাই গোবর ভালো জ্বলে। রান্নার কাজে গোবরের মুঠি ব্যবহারে গৃহিণীদের আমরা উৎসাহিত করি না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করতে মাত্র দুইটি গরুর গোবরই যথেষ্ট। গোবর দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের গৃহিণীরা বায়োগ্যাসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারেন। জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রান্তিক মহিলারা দুটি গাভী পালন করে তা থেকে দুধ ও ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ করে আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারেন।