চীফ রিপোর্টারঃ
করোনা রোগীদের অর্থ সাহায্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ট্রাস্টে টাকা প্রদানের কথা বলে বিভিন্ন মন্ত্রী, আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইত্যাদি ভুয়া পরিচয় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎকারী এক কুখ্যাত সাইবার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- আবু হোরায়রা ওরফে খালিদ। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২ টি মোবাইল ফোন ও ৩টি ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ড উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ (রবিবার) নাটোর জেলার সিংড়া থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
এ সংক্রান্তে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ডিএমপি নিউজকে বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক প্রথমে ভুয়া নিবন্ধিত সীম ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেইসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম থেকে টার্গেট ব্যক্তির নাম্বার সংগ্রহ করতো। এরপর তিনি নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা, কখনো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতা, কখনো মন্ত্রী ইত্যাদি ভুয়া পরিচয় দিয়ে অত্যন্ত চাতুর্যতার সাথে কন্ঠ পরিবর্তন করে ফোন করে বলত যে করোনাকালীন অর্থ সাহায্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। সেই ট্রাস্টে অর্থ প্রেরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করছেন। তারপর টার্গেট বা ভুক্তভোগী ব্যক্তি টাকা প্রদান করতে সম্মত হলে ভুয়া নিবন্ধিত বিকাশ, নগদ নাম্বার দিয়ে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করতো। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের কর্মকর্তা বা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীর পরিচয় দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্সে টাকা চাইতো,তাই অনেকে সেটিকে ভেরিফাই না করেই করোনায় সাহায্য মনে করে অনায়াসে টাকা দিয়ে দিতো। এরকরম অসংখ্য ভিক্টিমের কাছ থেকে উল্লিখিত উপায়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি। এ ভিকটিমের তালিকায় অনেক এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও রয়েছেন।
তিনি বলেন, গত বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব এসএম কামালের নাম ব্যবহার করে উল্লিখিত উপায়ে চাঁদা দাবীর বিষয়টি নজরে আসলে জনাব এসএম কামাল প্রথমে একটি জিডি করেন। মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হলে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এই কুখ্যাত প্রতারককে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং উক্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। এরপর জনাব এসএম কামালের পক্ষে তাঁর সহযোগী জনৈক কার্তিক বিশ্বাস ওরফে শুভ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলাটির তদন্ত নামে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। প্রথমে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই প্রতারকের অবস্থান সনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) নাটোর জেলার সিংড়া থানা এলাকা থেকে আবু হোরায়রা ওরফে খালিদ নামে এই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক শুধু এসএম কামাল নয় আরো অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের অনেক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মন্ত্রী ও তাঁদের পিএস, এপিএস পরিচয়েও প্রতারণা করে আসছিল।
এরকম প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো-
• সাইবার স্পেসে ব্যক্তিগত তথ্যাদি বিশেষ করে মোবাইল নম্বর পাবলিক করে না রাখা।
• কেউ টাকা চাইলেই যাচাই না করে কোনভাবেই অপরিচিত কাউকে টাকা না দেয়া।
• তারপরও কেউ প্রতারণার শিকার হলে আইন শৃঙ্থলা বাহিনীর শরনাপন্ন হওয়া।