ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
নামসর্বস্ব দাওরায়ে হাদিস জামিয়া হাফসা রা. ক্বওমি ব্যক্তিগত মহিলা মাদরাসায় প্রাচীর নির্মাণ বাবদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের গালাহার নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের ধীতপুর গালাহার নামক স্থানে মাদরাসাটির অবস্থান। স্থানীয় কৃষক মো. আব্দুল বারির ছেলে মো. মোজাম্মেল হক ২০১২ সালের দিকে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয় মেয়েরা সেখানে প্রাইভেট পড়তে আসা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে নিজের বসতঘরের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে নূরানি, নাযেরা, হিফজ ও কিতাব বিভাগের নামে ছাত্রী ভর্তি শুরু করেন তিনি। এ অবস্থায় বাড়ির ভেতরেই ছাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সম্প্রতি মাদরাসা ঘিরে নির্মাণ হতে থাকে প্রাচীর। ব্যক্তিগত এই মাদরাসায় কে বা কারা প্রাচীর নির্মাণে বরাদ্দ দিয়েছেন তার খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ থেকে গত অর্থবছরে এই মাদরাসার নামে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। বিষয়টি জানার পর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অন্য সদস্যরা হতবাক হয়ে যান। তারা ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরে ব্যাপক খোঁজ নিয়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের সত্যতা পান।
মাদরাসার সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ জানান, তিনি প্রতিষ্ঠা সময় থেকেই মাদরাসার সভাপতি পদে আছেন। কয়েক বছর ধরে পরিচালক মোজাম্মেল হক অর্থের অভাবে মাদরাসাটি আর পরিচালনা সম্ভব নয় বলে প্রচার করে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনি কমিটির কারো সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেননি। পরে জানা যায়, মাদরাসার নামে তিনি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন জেলা পরিষদের তার এক আত্মীয় নারী সদস্যের মাধ্যমে। অথচ এই মাদরাসাটির নামে কোনো জায়গা নেই। নেই উপজেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকাতেও। যে জায়গায় মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা মোজাম্মেলের বাবা আব্দুল বারির নামে। তিনি দীর্ঘদিনেও মাদরাসার নামে জায়গা ওয়াকফ করা ছাড়াও নিজের সন্তানদেরও বণ্টন করে দেননি। এ অবস্থায় কী করে এখানে সরকারের ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ হলো তা রহস্যজনক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মাদরাসার পাশের বৈরাটি গ্রামের আমান মাস্টারের মেয়ে আসমা উল হোসনা শিমুলের বিয়ে হয়েছে হালুয়াঘাটে। সেখান থেকেই তিনি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় তার কোটা থেকেই এই প্রশ্নবিদ্ধ প্রকল্প বরাদ্দ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুল বলেন, এটা আমি আমার ক্ষমতাবলে করতেই পারি। তা ছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কাজেই অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানার জন্য মাদরাসার পরিচালক মো. মোজাম্মেল হককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা আব্দুল বারি জানান, বাড়িসহ তার মোট জমি ৪২ শতক। তিন ছেলের মধ্যে কাউকে জমি ভাগ করে দেওয়া হয়নি। মোজাম্মেল তার বসতঘরের একটি কক্ষে অফিস ও ভেতরের কয়েকটিতে ছাত্রীদের পাঠদান করাসহ থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।
বাড়ির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তা জানা নাই।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে প্রশাসক মো. ইউসুফ খান পাঠান বলেন, কী করে কিভাবে বরাদ্দ গেল খোঁজ নিতে হবে। তা ছাড়া যেহেতু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এই অবস্থায় বাতিল করাও কঠিন। তার পরও তদন্ত করা হবে।