চীফ রিপোর্টারঃ
= ১০ সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী করা নিয়ে প্রশ্ন
নিয়োগবিধির লংঘন, ক্ষোভ গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে
নিজেদের প্রণীত নিয়োগবিধি উপেক্ষা করেই ডিপ্লোমাধারী ১০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। এ কাজে যুক্ত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চক্র। পদোন্নতি দিয়ে তাদের জেলায় জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর পদে বসানোর কৌশলও নেয়া হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগে অসন্তোষ বাড়ছে ইইডিতে কর্মরত গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে।
জানা গেছে, ২০২১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত নিয়োগবিধি অনুযায়ী, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেতে হলে ফিডার পদে (সহকারি প্রকৌশলী) কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞা থাকতে হয়। কিন্তু যাদের পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে, তাদের কারো সহকারি প্রকৌশলী পদে তিনবছর চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইইডির বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের মেয়াদের শেষ দিকে তিনমাস আগে আটজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন শিক্ষা প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির নেতারা। অভিযোগ আছে, তারা আর্থিক সুবিধা দেয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। জেষ্ঠ্যতার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও তখন প্রধান প্রকৌশলী আরিফুর রহমান এই কাজে সম্মতি দিতে রাজি হননি। যদিও এক পর্যায়ে ডিপ্লোমা সমিতির নেতারা বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলীকে হুমকিও দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সমিতির নেতারা। ঘটনার এক পর্যায়ে গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়াররাও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
তবে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর নজর এড়িয়ে এবার হঠাৎ করেই আবার সেই ফাইল চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে বলছে ইইডি। এবার ইইডি ও মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আগের আটজনসহ মোট ১০ জনকে পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে ১০ জনের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনেরও চেষ্টা করছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতারা। পদোন্নতির পর কে কোথায় পদায়ন নেবেন; সেটিও ইতোমধ্যে ঠিক করে ফেলা হয়েছে। তারা এ নিয়ে নতুন প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গেও কথা বলেছেন।
www.bahannonews.com
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইডির দুজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীদের বঞ্চিত করে ইইডিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। এতে ইইডি একটি পঙ্গু প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে আস্থা হারাবে। বিএসসি/এমএসসি প্রকৌশলীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে বিরোধ বাড়বে। কারণ জেলার এ মূল পদগুলো মূলত বিএসসি/এমএসসি প্রকৌশলীদেরই পদ। তাই এখনই এই অপতৎপরতার লাগাম টানা উচিত।
১০ জনের তালিকা বাহান্ন নিউজের হাতে এসেছে। পদোন্নতির খসড়া তালিকা অনুযায়ী, ১০ জনের সবারই সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে চাকরির বয়স মাত্র দুই বছর ছয়মাস ২২ দিন হয়েছে। তারা হলেন মো. কামরুজ্জামান, মো. মিজানুর রহমান, গোলাম মোস্তাফা, হাজেরুল ইসলাম, মতোয়ারা পারভীন, রতীশ চন্দ্র সেন, মো. আবু তাহের, মো. বদরুল আলম, সরকার হারুনুর রশিদ ও মো. দেলওয়ার হোসেন। একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও আছে।
কিন্তু বিধিবহির্ভূত হওয়ার কারণে যে কাজ আগে নাকচ হয়েছে; সেই কাজ আবার করার চেষ্টা কেন হচ্ছে? কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সরকারি সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ আবার ডিপ্লোমাধারী ১০ জন সহকারী প্রকৌশলীর তালিকাসহ ফাইল চেয়ে ইইডির পরিচালককে সেলফোনে অনুরোধ করেন। আবদুল্লাহ আল মাসুদ ফাইল চাওয়ার বিষয়টি বাহান্ন নিউজের কাছে স্বীকার করেন। তবে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া তো আমরা ফাইল চাইতে পারি না। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ কিন্তু কিভাবে ইইডিতে এ পদোন্নতি/পদায়ন করবেন? নিয়ম অনুসারে কি দেয়া যায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’
ইইডির পরিচালক রাহেদ হোসেন বাহান্ন নিউজকে বলেন, ‘হ্যা, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে ফাইলের বিষয়ে। যেহেতু আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে তাই আমি প্রধান প্রকৌশলী স্যারকে অনুরোধ করেছি। স্যার বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলবেন।’
প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমূল কাদেরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘না, আমাদের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে ওই ফাইলের বিষয়ে কোন অনুরোধ আসেনি।’ পরে অনুরোধ করা কর্মকর্তার কথা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে তো কোন অনুরোধ আসেনি। অন্য কর্মকর্তার কাছে এসেছে।’
নিয়ম অনুসারে কি এটা করা সম্ভব? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা সচিব স্যারের এখতিয়ার। আমি জানি না।’ কিন্তু যে ফাইল আগের প্রধান প্রকৌশলীর সময় নিয়মের কারণে নাকচ হয়েছে সেই ফাইল আবার কেন সামনে আসল? এমন প্রশ্নে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘হইতেই পারে। প্রধান প্রকৌশলী পরিবর্তন হয়েছে। এখন আগের ফাইল চাইতে পারে না? চাইতেই পারেন।’
এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘একদম আজগুবি কথা। আমরা কাউকে ম্যানেজ করে ফাইল অফিস থেকে পাঠানোরও কোন চেষ্টা করছি না। আবার মন্ত্রণালয়েও কোন ব্যক্তির সঙ্গে আমরা এ নিয়ে কথা বলিনি। চিফ স্যারকে ম্যানেজ করেছি ফাইল পাঠানোর জন্য এ কথা মিথ্যা। আমরা তো এমনিতেই যোগ্য।’
সুত্র, .bahannonews