চীফ রিপোর্টারঃ - দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ০৩ জুলাই ২০২২ তারিখে দেশের ১২ জেলায় একযোগে নতুন কার্যালয় চালু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চলমান ২৪টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এই ১২টি কার্যালয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, কমিশনার(অনুসন্ধান) ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার(তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক, দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও দুদকের মহাপরিচালকগণ কার্যলায়সমুহ একযোগে উদ্বোধন করেন।
দুদকের পরিচালকগণ ও জেলা পর্যায়ের উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
যে ১২ জেলায় দুদকের কার্যালয় চালু হয়েছে :
নারায়ণগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ), গাজীপুর (গাজীপুর ও নরসিংদী), গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর (জামালপুর ও শেরপুর), নওগাঁ (নওগাঁ ও জয়পুরহাট), কুড়িগ্রাম (কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট), ঠাকুরগাঁ ( ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়),চাঁদপুর (চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর), বাগেরহাট (বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা), ঝিনাইদহ (ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা) ও পিরোজপুর (পিরোজপুর ও ঝালকাঠি) সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও দুদকের পতাকা উত্তোলনের পর ফেস্টুন উড়ানো সহ ফিতা কেটে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, গোপালগঞ্জ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ| মাননীয় চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে অত্র কার্যালয়ের মাধ্যমে জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে মর্মে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন| উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সহ সুধী ও গুণীজন, উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ| চেয়ারম্যান দুদক, সজেকা, গোপালগঞ্জের নব দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোঃ সিফাত উদ্দিন কে পরিচয় করিয়ে দেন। দোয়া মোনাজাত শেষে অনুষ্ঠানে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়|
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুরের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় কমিশনার(অনুসন্ধান) ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান।
উপস্থিত বিভিন্ন সুধীজন ও দপ্তর প্রধানের বিভিন্ন মত ও প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,ঘুষ ও দুর্নীতির সুযোগ থাকা সত্বেও যিনি নিজেকে মুক্ত রাখেন তিনি সত্যিকারের বাহবা পাওয়ার যোগ্য।সমাজে একটা ধারনা আছে যে কেবল চাকুরীজীবীই দুর্নীতিবাজ ।
কিন্তু প্রকৃত অর্থে দুর্নীতি আরও বিস্তৃত হয়ে গেছে।বিভিন্ন পেশাজীবীরাও দুর্নীতিতে জডিয়ে পড়েছে।ব্যবসায়ী দুর্নীতি করে।মেয়াদহীন ঔষধ বিক্রি সরকারি কেনাকাটায় , চাকুরীতে নিয়োগে, সরকারী পরিষেবা প্রদানে দুর্নীতি হয়। এমনকি টাকার বিনিময়ে মানুষ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মিথ্যা মামলা দেয়া এগুলো সবই দুর্নীতি। অদৃশ্য ও টেকনিকাল দুর্নীতি গুলো তৃতীয় চোখ দিয়ে দেখতে হয়। সেগুলো হয় Highly influential । সে সকল দুর্নীতির খবর সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না ।
তিনি জানান সমন্বিত জেলা কার্যালয়সহ সদর দপ্তরে অভিযোগ বক্স রাখা আছে। কোথাও কোন দুর্নীতির তথ্য জানা থাকলে প্রমাণকসহ অভিযোগ দায়ের করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।তিনি বলেন,আমরা সত্যের সন্ধানে চলেছি।কাউকে মামলার নামে হয়রানী নয়, প্রকৃত অর্থে দুর্নীতিবাজদের চিন্হিত করে বিচারের সন্মুষীণ করাই দুদকের দায়িত্ব ।উপস্থিত সুধী জনের উদ্দেশ্যে তিনি জানান দুদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বাথে অধিকতর পরীক্ষা ও বাস্তবতার প্রয়োজনেই অনেক সময় দীর্ঘসূত্রিতা হয়ে থাকে।দুদকের সক্ষমতা প্রসংগে তিনি বলেন যে ,চার বছর আগেও যেখানে দুদকের মামলায় শাস্তির হার ছিল ৩৮% তা বর্তমানে প্রায় ৬৮% । সমন্বিত জেলা কার্যালয় এর উপপরিচালক জনাব শেখ গোলাম মাওলাকে উপস্থিত সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
দুৃর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় জামালপুরের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ জহুরুল হক, কমিশনার(তদন্ত)।পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জামালপুর ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন অফিস প্রধানসহ জেলা ও উপজেলা দুৃর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য,ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।এই সময় উন্মুক্ত আলোচনায় জামালপুর ও শেরপুরের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নতুন দুদক অফিস নিয়ে তাদের আশার কথা ব্যক্ত করেন।জাহাঙ্গীর সেলিম,দুৃর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জামালপুরের সাধারন সম্পাদক বলেন,"দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় থাকাকালীন সময়ে জামালপুর ও শেরপুরের মানুষের সময়, অর্থ, তদন্ত,অনুসন্ধানে ও মামলা পরিচালনায় যে প্রশাসনিক জটিলতা ও বাধা ছিল তা আজকের পর কমে আসবে।
মোঃ জহুরুল হক, কমিশনার(তদন্ত) বলেন,"দুর্নীতি দমনে শেরপুর ও জামালপুরের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে অনেকাংশে ।আপনারা নির্ভুল ও নিরপেক্ষ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আমি আশা করি’’।
এছাড়া,দুৃর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কিশোরগঞ্জেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, কেবল আইন করে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সারা দেশের জনগণসহ তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম চলছে। এরপরও যারা নিয়ম-কানুন না মেনে দুর্নীতি-অনিয়ম করেছে, অবৈধভাবে অর্থসম্পদের মালিক হচ্ছে তাদের জন্য বার্তা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশন তৎপর রয়েছে। যেকোনো বিষয় দল মত নির্বিশেষে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া ০১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কক্সবাজারে (কক্সবাজার ও বান্দরবন জেলা) ও ৩০ মার্চ ২০২২ থেকে মাদারীপুরে(মাদারীপুর ও শরীয়তপুর) চালু হয়েছে দুদকের নতুন ২টি কার্যালয়।
এতে মোট ৩৬ জেলায় জেলা কার্যালয়/ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে দুদক তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে ১১৩ জন নতুন সহকারী পরিচালক ও ১৩৭ উপসহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা দুদকে যোগদান করেছেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়ে দুদক পূর্ণোদ্যমে কাজ চালিয়ে যাবে। দুদকের অফিস থাকায় জেলাগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি দমন কার্যক্রম আরো জোরদার হবে।
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৩৩ কাচারী রোড, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবি সমিতির ৪ ও ৫ নং ভবনের বিপরীত পাশে।
ঢাকা কার্যালয়ঃ কে ৭৪/৫,কোরাতলী এআই ইউবি রোড খিলক্ষেত, ঢাকা, ১২২৯।
যোগাযোগঃ 01917925375 /01736554862 / 01721927699
প্রকাশক: মারুফ হোসেন কমল