৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ সারা বাংলা ময়মনসিংহের চৌকস এসপি শাহ্ আবিদ হোসেনের কর্মদক্ষতা অতুলনীয়।
১৩, নভেম্বর, ২০১৯, ১১:০৭ অপরাহ্ণ -

সুমন চন্দ্র ঘোষ:

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহ আবিদ হোসেন দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি সততার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। ওপেন সিক্রেট হয়েছে, পুলিশ সদস্য বদলী সংক্রান্ত বিষয়ে এক পয়সাও খরচ করতে হয়না। পুলিশ কন্সটেবল পদে জিরো ট্রলারেন্সনীতিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি।

পুলিশের একাধিক মহল থেকে জানা গেছে, পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন বদলী এবং নিয়োগ নিয়ে জিরো ট্রলারেন্সনীতিতে দায়িত্ব পালন করছেন। থানার ওসি থেকে শুরু করে কোন পুলিশ সদস্য বদলী হতে এক পয়সাও খরচ করতে হয়না। বদলী সংক্রান্তে এসপির দপ্তরে কোন টাকা খরচ না হওয়ায় অধস্তন কর্মচারীগণও কারো কাছ থেকে বেআইনী বা আবদার জনিত কোন সুবিধা নেওয়ার সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারছেন না। নিয়োগ সংক্রান্তে জিরোটলারেন্স নীতি বহাল থাকায় এই প্রথমবারের মত বিনা পয়সায় পুলিশ কন্সটেবল নিয়োগ হয়েছে। যাদের অনেকের অভিভাবক ভ্যান, রিক্সা, অটো চালক, কৃষি, কাঠ ও গার্মেন্ট শ্রমিকের মত সামান্য পয়সা দিন চালিয়ে আসছিল।

ময়মনসিংহ পুলিশের প্রতিটি চিত্র আমূল পরিবর্তন, স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি।

পুলিশ লাইন্স মেছ পরিচালনায় জবাবদিহিতা, মেছে খাবারের মানোন্নয়ন ও পুলিশের রেশনে মাননোন্নয়ন এবং খাবার উপযোগী পণ্য সরবরাহ কঠোর নজরদারী করে আসছেন। এছাড়া পুলিশ লাইন্সের চারপাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করে আসছেন। নিয়োগ, বদলী জিরো ট্রলারেন্সনীতি, মেছ পরিচালনায় স্বচ্ছতা, রেশন প্রদানে নজরদারী বৃদ্ধিসহ পুলিশের আভ্যন্তরীণ খাতে নানা সুবিধা নিশ্চিত করায় পুলিশ সদস্যদের মাঝেও স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা ফিরে এসেছে। পুলিশের মধ্যেও প্রচার রয়েছে, টাকা দিয়ে বদলী হতে হয়না, তাই বাড়তি টাকার জন্য অপরাধ কিংবা অপরাধীদের পিছনে দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই।

আইসিটিখাতে বিশেষজ্ঞ এই পুলিশ সুপার, পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন কাজের বিবরণী একটি মাত্র সফটওয়ারের মাধ্যমে জানতে ময়মনসিংহ পুলিশের পারফরমেন্স এভোলেশন সফটওয়ার নামক একটি পেইজ খুলেন। ওই পেইজের মাধ্যমে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের কাজের ভালমন্দ যাচাই এবং মাসশেষে ভাল কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরী সহজতর হচ্ছে। ঐ মুল্যায়ন প্রতিবেদনের আলোকেই ভাল পুলিশ সদস্যদের আরো মনোযোগী ও দায়িত্বশীল করে তুলতে ক্রেস্ট, সম্মাননা, সনদপত্রসহ আর্থিক প্রনোদনা দিয়ে আসছেন। পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেনের সৃষ্ট এই পুলিশ পেইজ অল্প সময়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে। পরবর্তীতে এই পেইজ গ্রহণ করেন পুলিশের আইজিপি। যা সারাদেশে বর্তমানে চালু করার চেষ্ঠা চলছে বলেও জানা গেছে। একইসাথে পুলিশ সদস্যদের আরো মনোযোগী হতে তাদের বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ভবন উন্নয়ন, মেরামত, আধুনিক সাজে নতুন করে রংবেরঙ্গে সাজিয়ে তুলা হয়েছে। এর মধ্যে গফরগাও সার্কেল অফিস, শহরের ২নং ফাঁড়ি ভবন ও কোতোয়ালী সার্কেল অফিস উল্লেখযোগ্য। একইসাথে পুলিশ লাইন্সের বাউন্ডারী ওয়ালে বিভিন্ন আকর্ষণীয় শ্লোগান সম্বলিত দেয়াল লিখন এক ব্যাতিক্রমী প্রচারণা করা হয়েছে। অভিজ্ঞ, দক্ষ, দায়িত্বশীল, সৃজনশীল পুলিশ সুপার তার পুর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ উদ্যোগে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ব্যাতিক্রমী ম্যুরাল নির্মাণ করছেন। যার মধ্যে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সন পর্যন্ত সময়ে জাতির জনকের বিভিন্ন ভাষণের নানা তথ্যচিত্র রয়েছে। নির্মাণাধীণ এই ম্যুরালের বামপাশে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৪২ শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকা এবং ডানপাশে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে ডিউটিরত অবস্থায় নিহত ৩৬ পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকা। এর আগে কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে চেতনা ৭১ স্থাপন করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন শাহ আবিদ হোসেন। তিনি এর আগে পিরোজপুরেও একটি ম্যুরাল স্থাপন করেছেন বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানান।

এসপি শাহ আবিদ হোসেন, পুলিশের পাশপাশি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ইভটিজিং বন্ধে কঠোর নির্দেশনা, মাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, জুয়ামুক্ত ময়মনসিংহ গড়া, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জঙ্গিমুক্ত ময়মনসিংহ গড়তে দিনরাত কাজ করছেন। দায়িত্বশীল, দক্ষ, কৌশলী এই পুলিশ সুপার সমাজের সকলস্তর থেকে অপরাধ দমন এবং মাদক, জুয়া ও জঙ্গিমুক্ত সমাজ গড়তে বিভিন্ন মসজিদে খুতবার আগে নিজেই বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া সমাজে শান্তি, অবাধ চলাফেরা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসাবে পরিচয় করে দিতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে প্রায় প্রতিদিনই নানা কৌশলে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পুলিশের উপর মানুষের আস্থা বাড়ানো এবং পুলিশভীতি দুর করতে কমিউনিটি পুলিশিং সভা বৃদ্ধি করেছেন। সপ্তাহের কোন একদিন তিনি নিজেই ঐ সব সভায় উপস্থিত হয়ে সাধারণ জনগণের অভাব-অভিযোগ প্রকাশ্য শুনে তা জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ঠ থানা, ফাঁড়ি পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে আসছেন। ফলে পুলিশভীতি কমে আসাসহ পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও জববাদিহিতা আগের তুলনায় অনেকাংশে নিশ্চিত হয়েছে।

আইন শৃংখলার উন্নয়নে জুয়া, ছিনতাই, চোর, পকেটমারমুক্ত শহর গড়তে পুলিশের প্রতিটি শাখাকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা শহরে (বর্তমান বিভাগীয় শহর) চুরি, ছিনতাই ও পকেটমার নেই বললেই চলে। মাদকের পরিস্থিতি সারাদেশে যাই হোক না কেন, ময়মনসিংহে মাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই বলে কড়া নির্দেশনা জারী করেন।

এ সময় এসপি বলেন, মাদকের সাথে কোন পুলিশ, রাজনীতিক বা যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক নিয়ে কঠোরতায় বিভাগীয় শহরে মাদকের বিচরণ যে কোন সময়ের চেয়ে অনেকাংশে কম বলেও শহরবাসী মনে করেন। অপরদিকে জেলা শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন রোডে যানজট নিরসনে শহরের একাধিক পয়েন্টে ওয়ানওয়ে রোড চালু করেছেন। এর মধ্যে চরপাড়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইট, বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, জিলা স্কুল মোড় অন্যতম। গত কয়েকটি ঈদে যার সুফল ভোগ করেছে।