চীফ রিপোর্টার = ময়মনসিংহে চাঁদার টাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের রাজকীয় সংবর্ধনা নিয়ে বিতর্ক,সমালোচন ও নিন্দার ঝড় উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ উঠেছে, সচিবের সংবর্ধনার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি হয়েছে ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য বিভাগে।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সংবর্ধনার আড়ালে গিফট নিতেই ওই কর্মকর্তা ময়মনসিংহে আসেন। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের একজন সচিব এভাবে সংবর্ধনা ও গিফট গ্রহন করতে পারেন কীনা? স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর ভয়ে সচিবের সংবর্ধনার জন্য চাঁদার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন এমন আলোচনা-সমালোচনাও চলছে ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম ফজলুল হকের আলোচিত এই সংবর্ধনায় যোগ দেন চট্টগ্রাম ও রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের দুই পরিচালক, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের দুই সিভিল সার্জন ছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৮টি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের দুই কুশলীব মজিবুর রহমান ও হুমায়ুন কবীর এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। অথচ খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের কোনো কর্মীকে অবহিত করা হয়নি। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বাচীপের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৬ নভেম্বর সকালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের শহীদ শাহাব উদ্দিন মিলনায়তনে স্বাস্থ্য বিভাগের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত নামকাওয়াস্তের এই মতবিনিময় সভার প্রধান আকর্ষণ ছিলো মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একেএম ফজলুল হকের জন্য আয়োজিত সংবর্ধনার।
সংবর্ধনার আড়ালে গিফট নিতেই ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ময়মনসিংহ আসেন বলে দাবি স্থানীয়দের। যদিও ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের বহুল আলোচিত পরিচালক ডা. আবুল কাশেম অকপটে স্বীকার করেছেন নিজেরা চাঁদার টাকা তুলে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। তার দাবি, ফুল দিয়ে বরণ আর ক্রেষ্ট প্রদানেই সীমিত ছিল সংবর্ধনার পর্ব।
তিনি সাংবাদিকদের জানান , আমরা ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরা টাকা দিয়ে এই আয়োজন করেছি। এটা করা যায় কীনা প্রশ্নের জবাবে জানালেন, বাঁধা কোথায়? মতবিনিয়ের নামে সংবর্ধনার আয়োজনে ময়মনসিংহসহ চট্টগ্রাম, রংপুর বিভাগ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিলিয়ে শতাধিক কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আকন্দ জানান, ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের আমন্ত্রনে তিনি সংবর্ধনায় যোগ দেন। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছিল কীনা জানতে চাইলে ডা. আমিন জানান, সেদিন শনিবার ছুটির দিন ছিলো বলে অনুমতির প্রয়োজন পড়েনি।
তবে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ সাংবাদিকদের জানান, ক্যাডার সার্ভিসে এই ধরনের সংবর্ধনার নজির নেই। ‘এটি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বাচিপ ময়মনসিংহের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান ভুইয়া।
এছাড়া নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতিসহ নানা অপকর্ম আড়াল করতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সংবর্ধনার এই আয়োজন করেছেন বলে মনে করছেন ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তারা। চাঁদার টাকার সংবর্ধনা ও গিফটের বিষয়টি দুদকের তদন্ত দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।