বার্নার্ড সরকার( ধোবাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি)ঃ
আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর পরিচালনার হুকুম দিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় ইয়াহিয়া ও ভুট্টো। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বা ২৬ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন স্বাধীনতা এবং এর অব্যবহিত পরই তিনি হন গ্রেপ্তার।
নবম অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে একাত্তর শীর্ষক আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ,বিপ্লবী বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন ও স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র জারি সম্পর্কে যেমন আলোচনা করা হয়েছে তেমনি বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করা হয়েছে সংগঠিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা যার আওতায় গড়ে তোলা হয়েছিল মুক্তিফৌজ, মুক্তিবাহিনী, গেরিলা বাহিনী এবং এসব বাহিনী লিপ্ত হয়েছিল সম্মুখ যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের মানুষের যেমন-নর-নারী,ছাত্র-ছাত্রী,কবি সাহিত্যক তথা বুদ্ধিজীবিদের পাশাপাশি বিদেশি সুশীল সমাজের অবদান ও ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্র ও দেশি-বিদেশী প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশাপাশি তাদের এদেশীয় দোসর দালাল হিসেবে শান্তিকমিটি,আলবদর, আলশামস,রাজাকার,রাজনৈতিক দল ও দেশীয় অন্যান্য সহযোগী কর্তৃক স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ড, বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা,নারী নির্যাতন ও সাধারণ মানুষকে এদেশ থেকে বিতাড়ন করে শরণার্থীতে পরিণত করার বিষয়সমূহ আলোচনা করা হয়েছে।
একই সাথে মুক্তিযুদ্ধে বৃহত শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও যুক্তরাজ্যের ভূমিকার পাশাপাশি জাতিসংঘ ও ইসলামি দেশগুলোর ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। সর্বেপরি ভারতের অবদানকে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। এতে করে দেখা গেছে ভারতের অবদান ব্যতীত আমরা কোনোভাবেই নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম ছিল না। এই অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে-যা থেকে পরিষ্কার হয় যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থাকলেও পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামে।
দশম বা শেষ অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল আলোচনা করা হয়েছে। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অর্থনৈতিক ভিত কিংবা অবকাঠামো কিছুই ছিল না স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের। তথাপি দেশটিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মাত্র নয় মাসের মধ্যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধগোলো স্থান পেয়েছিল সংবিধানে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর সে সময়ে ছিল সমার্থক। কেননা,বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশে ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রতীক। কিন্তু বৃহৎ রাষ্ট্র যেমন চীন,যুক্তরাষ্ট্র, ইসলামি রাষ্ট্রসমূহ যেমন সৌদি আরব বাংলাদেশ সৃষ্টিকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে যা তারা পছন্দ করেনি, অপমানিত বোধ করেছে। আবার দেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতা বিরোধী ও পাকিস্তানপন্থীরাতো ছিলই। এদের সকলের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর সপিবারে নিহত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী ব্যক্তি দল,এমনকি প্রত্যক্ষ খুনিরা ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান সংশোধন করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে। একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল শক্তি এদেশের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে দেয়া হয়নি এবং জানার সুযোগও দেওয়া হয়নি।
আমরা আশা করি বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশের পরিচালকগণ কর্তৃক চালুকৃত “স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস” মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে!,,,,