মারুফ হোসেন কমলঃ
ময়মনসিংহ জেলার শ্রেষ্ঠ উদ্ধারকারী ইউনিট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শ্রেষ্ঠত্তের পুরস্কার গ্রহণ করলো জেলা ডিবি পুলিশের ওসি শাহ্ কামাল আকন্দ।
ডিবি ওসির হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার ( অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহ্ আবিদ হোসেন।
উল্লেখ্য অদ্য ২৪/১১/১৯ তারিখ রোজ রবিবার পুলিশ লাইন্স, কনফারেন্স রুমে মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কল্যান সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ শাহ আবিদ হোসেন বিপিএম (বার), পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) । অনুষ্ঠানে অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের মাঝে সনদ পত্র ও শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করাহয়। অনুষ্ঠানে অক্টোবর /২০১৯ মাসের ভাল কাজের জন্য, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী অফিসারদের উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ সময় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন ।
ডিবি ওসি শাহ্ কামাল অাকন্দ ইতিমধ্যে ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ময়মনসিংহে মাদক,সন্ত্রাস ও ছিনতাই রোধে অভাবনীয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ময়মনসিংহবাসীর হ্নদয় জয় করতে সমর্থ হয়েছেন।
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা আবারো জেলায় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার লাভ করেছেন। জেলা পুলিশ মাসিক কল্যাণ সভায় এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। রবিবার পুলিশ লাইন্সে মাসিক কল্যাণ সভায় অক্টোবর/২০১৯ মাসের নানা সফলতার জন্য ডিবি পুলিশের ওসি, বিভিন্ন টিম লিডার, এসআইসহ অন্যান্যদের মাদক, অস্ত্র উদ্ধার, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য এ সব পুরস্কার, নগদ অর্থ, সম্মাননা, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারসহ সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশের আলোচিত হত্যাকান্ড ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড় থেকে মাথা, হাত ও পা বিহীন ট্রলিব্যাগ ভর্তি দেহ উদ্ধার মামলার কয়েকদিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন, হত্যাকান্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করায় জেলার শ্রেষ্ঠ উদ্ধারকারী ইউনিট নির্বাচিত হয়েছেন ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশ।এ লক্ষ্যে ডিবি পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দকে শ্রেষ্ট ওসি নির্বাচিত এবং ডিবি পুলিশকে শ্রেষ্টত্বের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া এ মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আক্রাম হোসেনকে এই মামলার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখায় শ্রেষ্ঠ অফিসার নির্বাচিত করা হয়। এসআই আক্রাম বলেন, এছাড়াও মাদক উদ্ধারে তার টিম জেলায় ম্রেষ্ট টিম হয়েছে। এছাড়া তিনি পিস্তল, গুলি, পাইপগান ও কার্তুজ উদ্ধার করায় শ্রেষ্ট অস্ত্র উদ্ধারকারী অফিসার নির্বাাচিত হয়েছেন।ডিবি পুলিশ জানায় এসআই আনোয়ার হোসেন দ্বিতীয় সব্বোচ্য মাদক উদ্ধারকারী টিম হিসাবে পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। অপরদিকে এসআই আলাউদ্দিন, মনিরুজ্জামান, মাসুদ জামালী, পরিমল চন্দ্র সরকার মাদক উদ্ধার, মামলার রহস্য উদঘাটনসহ নানা সফলতার জন্য পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ এ সব পুরস্কার প্রাপ্তরা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত)শাহ আবিদ হোসেনের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার, সম্মাননা, সনদ, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ গ্রহণ করেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী, এস এ নেওয়াজী, হাফিজুর রহমান,আল আমিন, ডিআইওয়ান মোখলেছুর রহমান আকন্দ, কোতোয়ালীর ওসি মাহমুদুল ইসলাম, ডিবির ওসি শাহ আবিদ হোসেনসহ বিভিন্ন থানার ওসি সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ডিবির ওসি জানান, নেত্রকোণার পূর্বধলার হুগলা গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে বকুলকে বালিশ চাপা ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে একটি চক্র।পরে হত্যার আলামত ও লাশের পরিচয় গোপন করার পরিকল্পনা হিসাবে লাশের শরীর থেকে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে ছয়টি টুকরো। টুকরোগুলো পলিথিন দিয়ে শক্ত করে মুড়িয়ে ট্রলি ব্যাগে (ব্রিফকেছ) ভড়ে।পরে শরীর ভর্তি ট্রলি ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ে এবং কুড়িগ্রাম জেলা সদর ও রাজাপুরে পৃথকভাবে হাত, পা ও মাথা নিশ্চিন্তে চলে যায় খুনী চক্র। ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড় থেকে হাত, পা ও মাথা বিহীন বিহীন শরীর উদ্ধারের ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ১০২,তাং ২৫/১০/১৯ দায়ের হয়। ব্রিফকেছ ভর্তি মাথা, হাত ও পা বিহীন শরীর উদ্ধারের ঘটনার নয়দিনের মাথায় ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশ নিহত মোঃ বকুলকে সনাক্তকরণসহ খুনের সাথে জড়িত থাকা চার খুনীকে গ্রেফতার করে। এ নিয়ে গত অক্টোবর পুলিশ লাইন্স হলরুমে এক প্রেস ব্রিফিং করেন।তিনি আরো জানান, গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ে একটি ব্রিফকেছ পড়ে থাকার খবর পেয়ে ডিবি, কোতোয়ালীসহ পুলিশের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝিকে সাথে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ব্রিফকেছটি অনেক ওজন এবং জঙ্গি গোষ্টির মাধ্যমে শক্তিশালী বোমা ফেলে রাখার মত সন্দেহ পোষণ করে পুলিশের উচ্চ পদস্থদের সাথে পরামর্শ করেন। এক পর্যায়ে পরদিন সকালে ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সহায়তায় ব্রিফকেছটি খুলে দেখতে পান হাত, পা ও মাথা বিহীন শরীর (বডি) পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। ব্রিফকেস ভর্তি খন্ডিত শরীর পাওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালী পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশকে ছায়া তদন্ত করতে তাৎনিক নির্দেশ দেন। ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্তের নির্দেশ পেয়ে পাটগুদামসহ আশপাশ এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এদিকে পনদিনই ২২ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সদর ও রাজাপুর এলাকা থেকে খন্ডিত পা এবং অপর পা, হাত ও মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় কুড়িগ্রাম পুলিশ একটি চিরকুট উদ্ধার করে। পরে ২৫ অক্টোবর কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ১০২, তাং ২৫/১০/১৯ দায়ের হয়। যা পরে ডিবি পুলিশের উপর তদন্তভার দেয়া হয়। চিরকুট এবং ডিবি পুলিশের উদ্ধার করা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে ময়মনসিংহের ডিবি পুলিশ নিহত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে চারজনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো ফারুক মিয়া, হৃদয় মিয়া, সাবিনা আক্তার ও ভাবী মৌসুমী আক্তার। গ্রেফতারকৃত চারজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন।