আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় থাকতে পারবেন না এমন নীতিমালা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না ময়মনসিংহের শিক্ষা প্রোকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী ইউছুফ আলীর ক্ষেত্রে। এ কার্যালয়ে প্রায় ৯ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
শিক্ষা প্রটোকল অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে,
নির্বাহী ইউছুফ আলীর গত ২০১৫সালের ৩রা আগষ্ট এ জেলায় যোগদান করে এখন পর্যন্ত (প্রায় নয় বছর) একই কর্মস্থলে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে চাকরি করার সুবাদে ডালপালা মেলেছে তার। সকল প্রকার নিয়ম-বিধি ভঙ্গ করে নিজস্ব নিয়মে ইচ্ছামাফিক দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের লক্ষ্যমাত্রা।
শিক্ষা প্রোকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদাররা বলছেন, দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে চাকরি করায় অনেকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের আত্মীয় বলে প্রভাব খাটিয়ে সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছেন। শিক্ষা প্রোকৌশল ভবন নির্মাণে ঠিকাদারদের উপর প্রভাব খাটিয়ে তিনি অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে- ময়মনসিংহ জেলায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী যোগদানের পর থেকে ভবন নির্মাণে অনিয়ম, কাজের গতি কমসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ! এসব অভিযোগের প্রমাণ পেলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা!এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক!
সুত্র মতে জানা গেছে,নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী
শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে পার্সেন্টিস বানিজ্য,ঘুষ বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য সহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা! নামে -বেনামে সম্পদ অর্জন সহ-পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স করে ইতিমধ্যে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন! এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চলছে নানা সমালোচনা!
অভিযোগ উঠেছে,আওয়ামীলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অর্থাৎ সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক কে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে প্রকল্পের রস চুষে নিয়েছেন তিনি! কাজ যেমনই হোক,নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলীকে কমিশন দিতেই হবে! আওয়ামী লীগের নেতাদের আত্মীয় বলে কথা! অন্যতায় হয়রানির শেষ নেই সংশ্লিষ্ট, ঠিকাদারদের! ফলে কাজে গাফিলতি করতে বাধ্য হন ঠিকাদাররা, নানা অনিয়মে জর্জরিত পরিচালনা বাজেট সংকট’সহ নানা কারণে চলমান এসব উন্নয়ন কাজগুলোয় স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সঙ্গে নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও ঠিকাদারি কাজের বিল ছাড়ে কমিশন বাণিজ্য ও ঘুস বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে! খোজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বর্তমানে কুলস পাল্টিয়ে তিনি নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয় দেন। কারণ এখনো তিনি বহাল তবিয়তে!
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল সূত্র জানায়, ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ জেলায় ২৪৭টি উন্নয়নকাজ চলমান আছে। এর মধ্যে রয়েছে চার তলা বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ভবন, ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ, ছয়তলা সরকারি কলেজ ভবন, পাঁচতলা মহিলা হোস্টেল এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন। তবে এসব উন্নয়ন নির্মাণে ঠিকাদারি কাজের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলেও র্দীঘ ৪ বা ৫ বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে অর্ধেক বা তার কিছু অধিক। এমন দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি ভবনের মধ্যে তিনটির কাজ ২০১৮ সালে শেষ হলেও স্থবির হয়ে আছে আরও অন্যান্য প্রকল্প।
এদিকে ফুলপুর, গৌরীপুর, ভালুকা’সহ জেলার প্রায় সব কয়টি উপজেলায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়নকাজে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে । সেই সঙ্গে ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যাবহারের অভিযোগও উঠেছে। ভালুকা উপজেলার এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উন্নয়ন কাজগুলোর বিল তৈরির প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। আর এসব কমিশন ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষে সহকারী প্রকৌশলী, অফিস সহকারী,হিসাব রক্ষক সহ সংশ্লিষ্টরা! নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিল করার সময় কমিশন তো দিতেই হয়। এটা ছাড়া কোনো অফিসেই কাজ হয় না।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ময়মনসিংহে আছি। এই সময়ে ময়মনসিংহের প্রতিটি সংসদীয় আসনে কমপক্ষে ৩০টি করে তিন তলা এবং চার তলা ভবন হয়েছে। সে ভবনগুলোর কাজের মানও সর্বোচ্চ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি। এতে শিক্ষার পরিবেশও সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। সেগুলো খতিয়ে দেখে মানসম্পন্ন সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। তবে অফিসে আমার অজান্তে কেউ কোনো কাজে নয় ছয় করেছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সেই সঙ্গে চলমান উন্নয়ন কাজ গুলোতে কিছুটা ধীরগতি চলছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এর নেপথ্যে , দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিচালনা বাজেট সংকট সহ নানা কারণ জড়িয়ে রয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে চলমান উন্নয়ন কাজ গুলো শেষ করতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশলে যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী। সেই থেকে প্রায় ৯ বছর ধরে তিনি আছেন ময়মনসিংহে! ফলে দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে দয়িত্ব পালন করার কারণে স্থানীয় ঠিকাদারদের সাথে তার সখ্যতা অনেক গভীর বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের। তবে স্হানীয় সচেতন মহল মনে করেন বিষয় টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।