তথ্য প্রতিদিন - সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে আন্দোলনে গতকাল দিনভর প্রায় অচল ছিল প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-কে কালাকানুন উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে এই আন্দোলন করছেন সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। তাদের চলা আন্দোলনের মধ্যেই গতকাল রাতে অধ্যাদেশটির গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। ওদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর-এ। গতকাল দিনভর কর্মবিরতি শেষে বিকালে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআর ভাগ করার অধ্যাদেশ সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরই ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে অসহযোগ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এনবিআর-এ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি ও অসহযোগ চলায় এই প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের অচলাবস্থাও কাটেনি। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ দেয়ার দাবিতে গতকালও নগর ভবন অবরুদ্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন তার সমর্থকরা।
সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ, অচলাবস্থা
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। সচিবালয়ের ভেতরে দ্বিতীয় দিনের মতো তারা এই বিক্ষোভ-মিছিল করেন। এতে কাজে স্থবিরতা দেখা দেয় সচিবালয়ে। কর্মচারীরা এই অনুমোদিত খসড়াটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়ো হতে থাকেন। ১০টা নাগাদ বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীতে পূর্ণ হয়ে যায় সচিবালয়ের এ চত্বর। ১০টার কিছু পর বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম ও মহাসচিব মো. মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল শুরু হয়। এরপর সেখানে যোগ দেন সভাপতি বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত পরিষদের অপর অংশ। আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী এসোসিয়েশনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যান্য সংগঠন যোগ দেয় মিছিলে।
মিছিল করার সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের কর্মচারী ‘এক হও লড়াই করো’, ‘অবৈধ কালো আইন, মানি না, মানবো না’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে দিয়ে নতুন ভবন, ক্লিনিক ভবনের সামনে দিয়ে ১১ নম্বর ভবনের সামনে আসে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। এরপর তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে ৪ নম্বর ভবনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে তার দপ্তরে দেখা করতে যান। তবে তিনি দপ্তরে ছিলেন না।
পরে মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয়ের এক নম্বর ফটক বা প্রধান ফটকের কাছে গিয়ে বসে পড়েন। সেখানে সংযুক্ত পরিষদ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় ২০ মিনিটের মতো ফটক বন্ধ ছিল। এ সময় সচিবালয় থেকে কেউ বের এবং প্রবেশ করতে পারেনি। পরে মিছিল নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬ নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে অবশ্য বিকাল ২টার দিকে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্মচারী নেতারা। একজন নেতা বলেন, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তাদের বলেছেন দাবির বিষয়টি তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরবেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়াটি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়ায় শৃঙ্খলা বিঘ্ন, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি করছেন কর্মচারীরা।
গতকাল সচিবালয়ের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ করার সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ঘোষণা দেন সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না। তিনি বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে যে অপপ্রয়াস নেয়া হচ্ছে, আমরা তাদের এই অপপ্রয়াস রুখে দেবো ইনশাআল্লাহ। এটি নিবর্তনমূলক আইন।
অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন: ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যে রকম যেটা যে সময়ে দরকার পড়ে, সেই সময়ে সেটা করা হয়। গতকাল আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ও কাঁচা চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। গত ২২শে মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সচিবালয়ে বিক্ষোভকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কী ভাবছেন?- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে আইনটা হচ্ছে এটা এরকম কিনা ২০১৮ সালে সংশোধন হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার একটা সংশোধন করে ইলেকশনটা যাতে ম্যানুপুলেট করতে পারে, ওই রকম কিছু কিছু সংশোধন করেছিল। ওই সংশোধনটা শুধু বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যে রকম আইনটি ছিল ওটাই করা হয়েছে। তারপরও যদি তাদের কোনোরকম (আপত্তি) থাকে, তারা আলোচনা করতে পারেন, কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন। কেন এ সময়ে এই অধ্যাদেশ করা জরুরি-এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটার ব্যাখ্যা তো আমি দিতে পারবো না, কেন এটা দিতেছে। যে রকম যেটা যে সময় দরকার পড়ে, সেই সময় সেটা দেয় (করা হয়)। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ২০১৮ সালে (আইনটা) পরিবর্তন হয়েছে। এখন আবার একটু সংশোধন হয়েছে। এটাতো ওই রকম কিছু না।
ছবি, সংগৃহীত
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ৩৩ কাচারী রোড, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবি সমিতির ৪ ও ৫ নং ভবনের বিপরীত পাশে।
ঢাকা কার্যালয়ঃ কে ৭৪/৫,কোরাতলী এআই ইউবি রোড খিলক্ষেত, ঢাকা, ১২২৯।
যোগাযোগঃ 01917925375 /01736554862 / 01721927699
প্রকাশক: মারুফ হোসেন কমল