এম এ রহমান জীবন কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ
সিলেটের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর অন্তর্ভুক্ত কানাইঘাট উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে সোমবার দাদা-নাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষোদ্ধ জনতা। প্রায় আড়াই ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনা সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন বিক্ষোদ্ধ জনতা। জানা যায়, ৪ অক্টোবর সোমবার কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের এমাজ উদ্দিনের বাড়ীর পাশে সকাল বেলায় বিদ্যুতের মেইন লাইনের একটি তার খোটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাঠিতে পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকার অনেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসকে অবহিত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগটি পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ঘটনাস্থলে না গিয়ে একটি দোকানে চা-পান খেয়ে ফিরে আসে। দুপুর ১ টার দিকে স্থানীয় নিজ চাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের রুহুল আমিন এর ছেলে আরিফুল ইসলাম স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে পল্লী বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে পৃষ্ট হয়ে আত্মচিৎকার শুরু করলে তাকে বাঁচাতে তার দাদা মাওলানা ফখর উদ্দিন (৬০) এগিয়ে আসলে তিনিও বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই দাদা-নাতি দুুুুুুুইজনেরই করুন মৃত্যু হয়। এ সময় বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে আহত হন একই গ্রামের ফয়ছল আহমদ ও তার ভাই ফয়েজ আহমদ। স্থানীয় লোকজন স্কুল শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও মাওলানা ফখর উদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাদের মৃত ঘোষনা করেন। বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে দাদা-নাতির মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক পর্যায়ে বিকেল আড়াইটার দিকে এলাকার কয়েক শত বিক্ষোদ্ধ লোকজন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সামনে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে ২ জনের করুন মৃত্যু হয়েছে এমন দাবী জানান তারা। এটা হত্যা কান্ড দাবি করে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম সহ দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সড়কে যান-বাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায় সেখানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিকেল ৪ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী ও থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম, ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক সেখানে গিয়ে বিক্ষোদ্ধ লোকজনকে শান্তনা প্রদান করে বলেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এ মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘঠনা ঘটলে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান লোকজন। এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষে আওয়ামীলীগ নেতা হুসেন আহমদ, আব্দুল হেকিম শামীম, রফিক আহমদ, সামছুদ্দিন বাবুল মহরি সহ অনেকে এ প্রাণ হানির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন খবর পাওয়ার পর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সেখানে গেলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতনা। ২ জনের মৃত্যুর পর তারা সেখানে গিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কোন সেবা পাওয়া যায় না, নানা ধরনের দূর্নিতি সেখানে হয় ও অফিসের লোকজন গ্রাহকদের কোন অভাব অভিযোগের পাত্তা দেননা যার কারণে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ জনিত দূর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির কাছে তারা তুলে ধরেন। তাৎক্ষনিক সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী নিহত ২ পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বিদ্যুৎ অফিস গেরাও কালে সেখানে ডিজিএম সহ অফিসের কোন পুরুষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন না। বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে নিহত ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও মাওলানা ফখর উদ্দিনের লাশ কানাইঘাট থানায় ময়না তদন্তের জন্য রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আখতার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে পড়ার সংবাদ পেয়ে তিনি তাৎক্ষনিক সেখানে অফিসের লোকজনদের পাঠান। এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন এবং উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পক্ষ থেকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ডিজিএম আখতার হোসেন জানান।