৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ গণমাধ্যম, সম্পাদকীয়, সারা বাংলা ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ—পাগলা সড়ক: অবহেলায় বেহাল জনজীবন
৫, অক্টোবর, ২০২৫, ১:১০ অপরাহ্ণ - প্রতিনিধি:

সম্পাদক অনুকুল দাশ অঞ্জন

 

 

ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ—পাগলা সড়ক: অবহেলায় বেহাল জনজীবন
ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ—পুরনো পাগলা সড়কের বর্তমান চিত্র যেন দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, মাত্র ১২ কিলোমিটারের এই পথে ছোট—বড় মিলে প্রায় ৩০০ খানাখন্দ ছড়িয়ে আছে। প্রতিদিন এই রুট দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে; চলাচল করে শিল্পাঞ্চলের ভারী যানবাহনও।

 

অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বছরের পর বছর পড়ে আছে অবহেলায়। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি গর্ত এড়াতে বারবার ব্রেক কষতে হয়, কোথাও আবার ধাক্কায় লাফিয়ে ওঠে যাত্রীরা। বর্ষাকালে জমে থাকা পানি এবং শুকনো মৌসুমের ধুলাবালি যাত্রাকে করে তুলছে অসহনীয়। বিশেষভাবে ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুল—কলেজ শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনও। রোগীরা গর্তের ঝাঁকিতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন—যা এক ধরনের মানবিক বিপর্যয়। অন্যদিকে, প্রতিনিয়ত এই সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা তৈরি করছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে মাসে একাধিকবার সার্ভিসিং করাতে হচ্ছে, অথচ আয় বাড়ছে না। ব্যবসায়ী মহল বলছে, বাড়তি সময় ও খরচের কারণে শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি—মুখী পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও এখানে সর্বদা বিদ্যমান। প্রায়ই বাইক উল্টে কিংবা রিকশা—ইজিবাইক খাতে পড়ে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষায়, দুর্ঘটনা এখানে যেন নিত্যদিনের ঘটনা। অবাক করার মতো বিষয় হলো, ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত এই সড়ক ছিল একসময় ঢাকার বাণিজ্যের প্রধান ধমনি। জুট মিল, কটন মিল ও গুদামঘরসমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের জন্য এ পথের গুরুত্ব অপরিসীম ছিল। স্বাধীনতার পর একাধিকবার সংস্কার হলেও মূল কাঠামো আজও বহন করছে সেই পুরনো চেহারা। বর্তমান শিল্প—অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী এ সড়ক সংস্কার বা আধুনিকায়ন তো দূরের কথা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতাই সমস্যাটিকে দীর্ঘায়িত করছে। ঢাকা বিভাগের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বছরের পর বছর শুধু প্রতিশ্রম্নতির বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে কতৃর্পক্ষ। কিন্তু প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে সড়ক চলাচলযোগ্য হয় না, মানুষের জীবনও সুরক্ষিত হয় না। এখানে এখন জরুরি হলো—দুই বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া। শুধু খানাখন্দ ভরাট নয়, শিল্পাঞ্চলের ভারী যানবাহনের চাপ সহনীয় করে সড়কটির কাঠামো উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কয়েক মাস পর আবার একই সমস্যায় পড়তে না হয়। একটি মাত্র সড়কের অবহেলা কেবল স্থানীয় নয়, জাতীয় অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই দায়সারা প্রতিশ্রম্নতির চক্র থেকে বেরিয়ে এসে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াই এখন সময়ের দাবি।